৮ মাসে ৩১১ বন্ড লাইসেন্স স্থগিত
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২১
ঢাকা: বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় বা রাজস্ব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত ৮ মাসে ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত ও ৯টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীনে মোট সক্রিয় লাইসেন্স ৩ হাজার ৮৩০টি। নিষ্ক্রিয় লাইসেন্স রয়েছে ২ হাজার ৯৮৩টি আর মোট বন্ড লাইসেন্স রয়েছে ৬ হাজার ৮১৩টি। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিযান, প্রিভেনটিভ অভিযান ও নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বন্ড অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটিত হয়। সে মোতাবেক অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড ও বিন লক করে দেয় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। ফলে এসব লাইসেন্স ব্যবহার করে আর কেউ বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি রফতানি করতে পারে না। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, শুনানি গ্রহণ ইত্যাদি আইনগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে লাইসেন্স চূড়ান্ত বাতিল করা হয়।
আরও জানা গেছে, যাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তারা ফেব্রিক্স, কাগজ, বিওপিপি ফিল্ম, পিপি দানা, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্টকার্ড ও সুতা বন্ড সুবিধায় আমদানির পর তা খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন। আর সেই অপরাধে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কতিপয় দুষ্টু ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার আওতায় পণ্য তৈরি ও রফতানির পরিবর্তে কাঁচামাল এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে করে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দেশীয় শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত শুল্ককর পরিশোধ করে যে সকল ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করে তারা বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ঝরে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে আগে নিস্ক্রিয় ছিল ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। গত ৮ মাসে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১৫৯টি অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। অভিযানে ৭১টি যানবাহন আটক, ছয়টি গুদাম সিল, ১১২টি বিভাগীয় মামলা করেছে। আর এ মামলায় জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ২০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আর আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ১৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি কাজে বাধাদান ও জালিয়াতি করায় দুটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আর বিভিন্ন অভিযোগে ২৮টি বিন লক করেছে। অন্যদিকে অভিযানে মামলা হওয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিজেএমইএর গার্মেন্টভুক্ত প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্ডের অপব্যবহার রোধে বিজিএমইএ ওএক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এসব সংগঠনের কিছু ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এখন যদি তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি বন্ডের লাইসেন্স নিয়ে তার অপব্যবহার করে কেউ তাহলে সৎ ব্যবসীরা উৎসাহ হারায়। বন্ডের অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলা উচিত। এজন্য এনবিআরকে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। বন্ডের কার্যক্রমের একটা নীতিমালা আছে। সেটি মেনে কার্যক্রমের একটি নীতিমালা আছে সেটি মেনে ব্যবসায়ীরা কাজ করছে কি না দেখার দায়িত্ব বন্ড কমিশনারের। তবে অনিয়ম যদি হতে থাকে তাহলে সেই দায়ভার কমিশনারের ওপর বর্তায়। সে জন্য এনবিআর যত কঠোর হবে বন্ডের কার্যক্রমে তত বেশি গতি আসবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে সরকার বন্ড লাইসেন্সধারীদের সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেই সুবিধার অপব্যবহার করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সেই নির্দেশনা কমিশনারেটগুলোকে দেওয়া হয়েছে।’