Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশ ছেড়ে ‘পালিয়েছেন’ ৩০০ নেতাকর্মী


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:১৬

ঢাকা: রাজনীতির নামে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তির প্রয়োগসহ যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে শুদ্ধি অভিযান। এ অভিযানের ফলে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম করে দলের ইমেজ ক্ষুণ্নকারী নেতাকর্মীরা আছেন ‘দৌড়ের ওপর’।

ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীর পদত্যাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী ‘যুবলীগ নেতা’ গোলাম কিবরিয়া শামীমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের বিতর্কিত, অপকর্মকারীদের শাস্তি দিয়ে দলকে শুদ্ধ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় শুদ্ধি অভিযান এড়াতে বিদেশে গিয়ে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অন্তত ৩০০ নেতাকর্মী। এছাড়া এই মুহূর্তে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন সমসংখ্যক নেতাকর্মী। আবার অনেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালানো নিয়ে বিতর্কে আসা ক্লাবের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ক্যাসিনো বিতর্কে জড়িত আরেক নেতা ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরছেন না।

এরই মধ্যে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত জি কে শামীম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য কলাবাগান ক্রীড়াচক্র সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে শুক্রবার নগরীর কলাবাগান এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হতে পারেন এমন আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সম্রাটও গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নানা অপকর্মের তথ্য উঠে আসে ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে শাহাবুদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজারের পাঁচটি মার্কেট।

গুলিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছে যুবলীগ নেতা এখন এক আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন মার্কেটের অবৈধ জায়গায় দোকান স্থাপন করে তিন-চারজনের কাছে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের আলী আহম্মেদের ডান হাত হওয়ায় ওই ক্লাবের ক্যাসিনো কারবারের টাকার ভাগও যেত তার পকেটে। প্রতিদিন শাহাবুদ্দিন ২০ হাজার টাকা পেতেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোর বোর্ড থেকে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের মার্কেটের দোকান বরাদ্দ নিয়েও নানা কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের ট্রান্সফরমারও বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা বিয়ে করে সংসার করছেন। কিন্তু তারপরও স্বপদে বহাল রয়েছেন। দক্ষিণ খান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন সৌরভ সংগঠনের নেতাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ে করেছেন। তুরাগ থানার সভাপতি শফিকুর রহমানও বিবাহিত।

এছাড়া তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাসানের নামেও অভিযোগের পাহাড়। সাউদার্ন গার্মেন্ট, আইএফএল গার্মেন্টস, সাইফ টেকসহ স্থানীয় ১৫টি গার্মেন্টস থেকে চাঁদা তোলা, প্রায় তিন হাজার অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা পরিচালনা করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন, ১৩ নং সেক্টরে রাজউকের জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়াসহ মাদক ব্যবসায় ছত্রছায়া দান করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় তিনশ নেতাকর্মী দেশের বাইরে চলে গেছেন। যারা দেশে আছেন তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। নতুন নম্বর দিয়ে গুটি কয়েক পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়েও নেই নেতাকর্মী। অনেক কার্যালয়ের তালাও খোলা হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন ত্যাগী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে সারাবাংলাকে জানান, বিএনপি জামায়াত থেকে এসে যারা এত দিন দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলে তাদের অ্যাকশন নেওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। কারণ এই অল্প সংখ্যক নেতার কারণে পুরো দলের বদনাম। ওদের বিরুদ্ধে কঠিন অ্যাকশন নেওয়া হোক এমন দাবি তাদের।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি তারা সবাই অপরাধে জড়িত নই। সামান্য কয়েকজনের কারণে দলের বদনাম হচ্ছে। অপকর্মকারী নেতারা দলে না থাকলেও দলের সামান্য ক্ষতি হবে না।’

অপর একজন নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে কঠোর হয়ে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দলে এসব অপকর্মকারীদের উৎখাত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ রকম কঠোর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।’

চলমান অভিযান বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে তা চলবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যাওয়ার সময় বিমান বন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, যতবড় গডফাদার হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ অভিযান চলতে থাকবে।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে এ অভিযান শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয় বরং সারাদেশে চলবে। যারা মদ, জুয়ার আসর বসিয়ে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে তারা কেউ ছাড় পাবে না। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।’

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। ফৌজদারি অপরাধে কেউ গ্রেফতার হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা কে কোথায় আছেন তা বলা মুশকিল।’

আওয়ামী লীগ ক্যাসিনো জিরো টলারেন্স যুবলীগ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর