Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাত্রদলের কাউন্সিল: ‘মেকানিজম’ হয় হোয়াইট হাউজে!


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:০৬

ঢাকা: স্বচ্ছ ভোটে নেতা নির্বাচনের গল্প মুখে মুখে ফিরলেও ছাত্রদলের কাউন্সিল ছিল পুরো ‘মেকানিজম’ নির্ভর। রাজধানীর হোটেল ‘হোয়াইট হাউজে’ এই ‘মেকানিজম’ হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এবং ছাত্রদলের সাবেক দুই প্রভাবশালী নেতা পুরো মেকানিজমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রদলের কাউন্সিলের সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু আদালতের আদেশের কারণে কাউন্সিল তিন দিন পিছিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় নানা ‘মেকানিজম’। ছাত্রদলের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে কেউ প্রচুর টাকা ঢালেন, কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের নিজেদের কব্জায় আনার চেষ্টা করেন।

জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত টানা চার দিন রাজধানীর শান্তিনগরের হোটেল হোয়াইট হাউজে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশীদ হাবিব এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহ্সান কাউন্সিলের পুরো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ সেট করেন।

কয়েকজন প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া জাকিরুল ইসলাম জাকির শুরু থেকেই সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতিকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন মির্জা আব্বাসের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশিদ হাবিব। এর নেপথ্য কারণ হলো— জাকিরুল ইসলাম জাকির ও হাবিবুর রশীদ হাবিব— দু’জনের বাড়িই নেত্রকোনা।

কিন্তু ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কাউকে জিতিয়ে আনতে হলে সর্বশেষ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থন অপরিহার্য। কারণ, তাদের হাত দিয়েই সারাদেশে কমিটি হয়েছে। তাদের পছন্দের লোকেরাই হয়েছেন কাউন্সিলর। তাদের অনুসারীরাই পেয়েছেন পদ-পদবী।

এসব বিবেচনায় পছন্দের প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম জাকিরকে সাধারণ সম্পাদক বানাতে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশীদ হাবিব ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহ্সানের শরণাপন্ন হন। রাজিব আহ্সানের বরিশাল অঞ্চলের ভোটগুলো নেত্রকোনার জাকিরুল ইসলাম জাকিরকে ‘দেওয়ানোর ব্যবস্থা’ করতে বলেন হাবিবুর রশীদ হাবিব।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, হাবিবুর রশীদ হাবিব ও রাজিব আহ্সানের মধ্যে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনও হয়েছে এ উদ্দেশ্যে। আর এই লেনদেনের ফলেই নিজের এলাকায় দু’জন সভাপতি প্রার্থী ও দু’জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও রাজিব আহ্সান কাজ করেছেন নেত্রকোনার জাকিরুল ইসলাম জাকিরের জন্য।

জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে মির্জা আব্বাসের বাসায় ভোটগ্রহণের সময় বরিশাল অঞ্চলের কাউন্সিলরদের পেছনে লেগে থেকেছেন রাজিব আহ্সান। কখনো কখনো বুথ পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করেছেন কাউন্সিলরদের সঙ্গে। চোখের ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তার পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে।

এছাড়া কাউন্সিলের আগের তিন দিন হোয়াইট হাউজ হোটেলে বসেই সারাদেশের কাউন্সিলরদের নম্বরে ফোন দিয়ে জাকিরুলের জন্য ভোট চেয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য হাবীবুর রশীদ হাবিব ও রাজিব আহ্সান। ভোটগ্রহণের চার দিন আগে ঢাকায় আসা কাউন্সিলরদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন হোয়াইট হাউজেই। প্রচুর টাকা-পয়সাও খরচ করেছেন তাদের পেছনে। আর এই কাজে লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

অসমর্থিত একটি সূত্রমতে, শুধু আর্থিক সুবিধা গ্রহণ নয়, আঞ্চলিক রাজনীতির ‘ইজম’টাও কাজ করেছে রাজিব আহ্সানের মধ্যে। তিনি কিছুতেই চাননি বরিশাল অঞ্চলে আর কেউ তার মতো নেতা হয়ে উঠুক। সে কারণেই সভাপতি পদে বরিশালের ছেলে তানভীর রেজা রুবেল, ঝালকাঠির ছেলে মামুন খান, সাধারণ সম্পাদক পদে পটুয়াখালীর ছেলে তানজিল হাসান, বরিশালের ছেলে জুয়েল হাওলাদার তার সমর্থন পাননি। অন্যদিকে নেত্রকোনার ছেলে জাকিরুল ইসলাম জাকিরের জন্য জনে জনে ভোট চেয়েছেন রাজিব আহ্সান।

অথচ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ঠিকই নিজ এলাকা নরসিংদীর প্রার্থী ইকবাল হোসেন শ্যামলকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে নিয়েছেন। কোনো হোয়াইট হাউজ ‘মেকানিজমে’ যুক্ত না হয়ে পছন্দের প্রার্থীর জন্য নিরবে কাজ করে সফল হয়েছেন তিনি— এমনটিই ধারণা ছাত্রদল নেতাদের।

তবে এসব বিষয় নিয়ে ছাত্রদল বা বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতা সরসরি কথা বলতে রাজি হননি। রাজিব আহ্সানের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ’১৪ সেপ্টম্বর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় খেলা। যে যেভাবে পেরেছে, খেলেছে। বাইরে একটা ভালো কাউন্সিল দেখালেও ভেতরে ভেতরে নানা মেকানিজম হয়েছে। তবে কেউ সফল হতে পারেনি। মাঝখান থেকে অন্য দু’জন জিতে গেছেন।’

 

কাউন্সিল ছাত্রদল মেকানিজম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর