‘ছয় বছরতো হলো আর কতো?’
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:১৮
আরিফুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার (সাগর সারোয়ার) ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনি হত্যার ৬ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ (রবিবার)। এতো দিনেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। তাই বিচারের আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছেন মামলার বাদি রুনির ভাই নওশের আলম রোমান।
হতাশার সুরে সারাবাংলাকে তিনি বললেন, মামলা কী অবস্থায় আছে, তদন্ত কতদূর এগুলো কিছুই জানি না। জানতে চেয়েও উত্তর পাই না। এখন আর জানার চেষ্টাও করিনা। মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই, কবে নাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে, মামলাটির বিচার আদৌ শুরু হবে কিনা তা জানিনা। মামলাটির বিচার শুরু হবে এমন আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছি। ছয় বছরতো হলো, আর কতো?
সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর গত ছয় বছরে প্রতিবেদন দাখিলের সময় পিছিয়েছে ৫৪ বার। পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বারবার সময় বেঁধে দিয়েছেন ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম। কিন্তু কোনো বারই তা আদালতে জমা পড়েনি। মামলা সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে তলব করে অগ্রগতিও জানতে চেয়েছেন আদালত। এমন দীর্ঘসূত্রতায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে দ্রুত চার্জশিট দাখিলের তাগাদাও দিয়েছেন মুখ্য মহানগর হাকিম। কিন্তু প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বারবার নেয়া হয়েছে নতুন তারিখ। এ অবস্থায় আগামী ১৩ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আবারও নতুন তারিখ দিয়েছেন আদালত।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এসি মহিউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলার আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। আংশিক রিপোর্ট এসেছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলেই প্রতিবেদন দেয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে কতদিন লাগবে তা বলতে পারেন নি তিনি।
মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে মামলা সম্পর্কে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত নিতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কোন মতামত চাননি।
প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব বিষয়ে ফৌজদারী অপরাধ বিশেষজ্ঞ সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজি সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবেদন দাখিলের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা আইনে নেই। তদন্ত শেষ হলেই তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তবে এ সময়সীমা অনির্দিষ্টকাল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
তিনি বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের একটি বিধান আছে। এটি না পারলে তার কারণ দেখিয়ে একই আইনের ১৬৭(৫) ধারায় ১২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে। কিন্ত এগুলোর কোনটিরই বাধ্যবাধকতা নেই।
সাগর-রুনির মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয় বছর অনেক সময়। অনাবশ্যক বিলম্ব ছাড়া এ সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত ছিলো। পরবর্তীতে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিল করার বিধান তো আছেই।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন নিহত সাগর-রুনির বাসা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় নৃশংশভাবে খুন হন সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি। মামলার ৮ আসামির দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন।
সারাবাংলা/এআই/জেডএফ/এসআই