পা দিয়ে দিচ্ছে দাখিল পরীক্ষা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:২৪
মো. মনিরুল ইসলাম ও মাকসুদা আজীজ
স্বাভাবিক জীবনে চলার পথে কোনো অঙ্গের কম কার্যক্ষমতার জন্য যারা প্রতিবন্ধকতা পোহায় তাদের আমাদের সমাজে বলা হয় প্রতিবন্ধী। এইসব প্রতিবন্ধকতাকে স্বীকার করেই যারা প্রবল মনের জোরে এগিয়ে যায় তাদের বলে জীবন জয়ী। এমনই একজন বেল্লাল। বাড়ি কুয়াকাটা।
জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই বেল্লালের। তবে দু হাতের আশায় থেমে যায়নি তার জীবন। থামতে দেয়নি সে। দুটো পা তো আছে। পা দিয়েই সে শিখে গিয়েছে লেখার কাজ। এ বছর পা দিয়ে লিখেই দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে বেল্লাল।
অসহায় এ ছেলেটির সঙ্গে শুধু প্রকৃতিই বৈরী আচরণ করেনি, করেছে প্রতিবেশী ও স্বজনরাও। হাত না থাকা মানুষটিকে মানতে পারেনি কেউই। শিশু বেল্লালকে ঘিরেই তৈরি হতে থাকে নানান গল্প, কুসংস্কার। ঘটনাটা এক পর্যায়ে এমন হয়ে যায় যে বেল্লালকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হন ওর বাবা-মা।
আমি তখন ঠিক করি, আমার ছেলে কারও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বস্তু হবে না। আমার ছেলে শিক্ষিত হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, বলেন বেল্লালের মা হোসনে আরা। ছোট্ট হাত ছাড়া বেলালকে তিনি প্রশিক্ষণ দেন পা দিয়ে লেখার। প্রথমে স্লেটে চক দিয়ে ঘষে ঘষে দাগ দিত সে, আস্তে আস্তে পা দিয়েই মুক্তঝরা লেখা লিখতে শুরু করে বেলাল।
এরপর ভর্তি করা হয় এক কিলোমিটার দুরের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুরু হয় বেল্লালের শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জীবন সংগ্রাম। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সে মায়ের সহায়তায় প্রতিদিন এক কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয় নিয়মিত উপস্থিত হয়। পা দিয়ে লিখেই বেল্লাল ৫ম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছে।
তবে দুটি হাত না থাকাই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয় বেল্লালের জীবনে। বেলালের বাবা মো.খলিল আকন একজন দিনমজুর। বাড়িতে আছে বেল্লালের আরও তিনটি ভাইবোন আছে। দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের এই মেধাবী প্রতিবন্ধী কিশোরের সংগ্রাম থেমে যাবার পথে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকলেও কিছুই জুটেনি বেল্লালের ভাগ্যে। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তার যে চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতা দরকার, তার কোনোটির সামর্থ্য নেই ওর পরিবারের। কাজ করে পড়বে, সে উপায়ই বা কই?
বেল্লালের বাবাই আর চাচ্ছেন না বেল্লাল লেখাপড়া করুক। লেখাপড়া করে যে ও কাজ পাবে তার নিশ্চয়তা কই? ঘরে দুটি বিবাহযোগ্য কন্যা আছে তার। ছেলের পিছনে ব্যয় করে ওদের ভবিষ্যত হুমকিতে ফেলার ঝুঁকি নিতে রাজি না তিনি!
তবে নিজের স্বপ্নের পথে অনড় বেলাল। তার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা শেষে এক জন আদর্শ শিক্ষক হওয়া।
তার শিক্ষক উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, বেল্লাল অত্যন্ত মেধাবী রোদ ,ঝড় বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন সে নিয়মিত মাদ্রাসা আসতো।
হয়তো কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটবে, কোথাও না কোথাও থেকে কেউ না কেউ আসবে বেলালের জীবনে দেবদূত হয়ে। তার হাত ধরে সফল হবে বেল্লালের জীবনের স্বপ্ন! আছে কি কেউ?
সারাবাংলা/এমআই/এমএ