Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ— এডিবির পূর্বাভাস


২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৩৫

ঢাকা: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে শিল্প খাত। জাতীয় বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯’-এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশন কার্যালয়ে হালনাগাদ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ সময় এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্য দেন। আর মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে। এর পাশাপাশি উচ্চতর প্রবাসী আয়ের কারণে বাড়বে ভোগব্যয়। একইসঙ্গে সহজ মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়বে। ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করতে চলমান সংস্কার এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুবাদেও বাড়বে প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ভ্যাটের আওতা বাড়ার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অগ্রগামী। রেমিট্যান্স প্রবাহ, সহজ মুদ্রানীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সংস্কার কার্যক্রম, অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রফতানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ ইত্যাদি।’

দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘সুশাসনের জন্য এটা খুবই ফলপ্রসু হবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তবে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। থেমে গেলে হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাস্তা, বন্দর এবং পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশি ও অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মূল এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে বলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছিল এবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ, যা হালনাগাদ প্রতিবেদনে একই রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা মূল পূর্বাভাসে ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অংশ থাকবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

এদিকে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

আউটলুক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেখান থেকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আমদানির ক্ষেত্রে রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। কারণ সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে প্রচুর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এ বছর খাদ্য আমদানি কমতে পারে। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক বাড়ায় এটা হতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমবে। সেক্ষেত্রে এ খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।

এডিবি জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর