পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায় বিচারের সুযোগ বাড়াবে গ্রাম আদালত
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৪৯
ঢাকা: দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইনিসেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) উদ্বোধন করা হয়েছে। এই প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনকে আঞ্চলিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করে তুলবে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাঙ্গামাটিতে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাউল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি প্রমুখ।
ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় থেকে এক বার্তায় জানান হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায় বিচারের সুযোগ বাড়াতে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনডিপির (জাতিসংঘ সহায়তা কর্মসূচি) সহযোগিতায় পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে ।
প্রথম পর্যায়ের (২০০৬-২০১৫) সফল বাস্তবায়নের ভিত্তিতে, বাংলাদেশের ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইনিসেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়ানো।
বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন বাড়তি আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রসারিত হতে চলেছে। এতে স্থানীয় প্রশাসন আঞ্চলিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তাকে আমলে নেয় এবং সুবিধা বঞ্চিত জনগণের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে স্থানীয় সাধারণ মানুষ, বিশেষত নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। বর্ধিত এই আর্থিক সহায়তার ফলে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ-২ প্রকল্পে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বের পরিমাণ দাঁড়াল ২৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ইউরো।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার জনগণের দোরগোড়ায় সব ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর। গ্রাম আদালত এমনই একটি সেবা, যা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠা করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম। এই প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনকে আঞ্চলিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তায় সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে শক্তিশালী করে তুলবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কম দামে ও দ্রুততম সময়ে ন্যায় বিচারের সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সময়ই বাংলাদেশের সামাজিক ন্যায়বিচারকে শক্তিশালী করে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ; যাতে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র মহিলারা ন্যায়বিচার পেতে পারে এবং তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পর্যায়ে আইনি সেবা পায়।’
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, ‘কাউকে পিছনে না রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর সে কারণে অবশ্যই সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এ প্রকল্প জোরদার ভূমিকা পালন করবে।’