প্রধান প্রকৌশলীকে ‘বাঁচাতে’ গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রকৌশলীকে ওএসডি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৪৬
ঢাকা: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দফতরের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডারে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’কে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি-রিজার্ভ) করা হয়েছে। যদিও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার দুই মাস পর উৎপল কুমার নতুন দায়িত্ব নেন। কোনো ‘দোষ না থাকলেও’ প্রধান প্রকৌশলীকে ‘বাঁচাতেই’ তড়িঘড়ি করে তাকে ওএসডি করা হয়েছে বলে অভিযোগ গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান এই প্রকৌশলীর।
ভুক্তভোগী উৎপল কুমার দে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে ওএসডি করা হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করলে এর সত্যতা মিলবে। কারণ টেন্ডারের অনেক পরে আমি এখানে যোগ দিয়েছি।’
‘আশা করি গণপূর্তমন্ত্রী বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। মন্ত্রীর ওপর আমার পূর্ণাঙ্গ আস্থা আছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাক— এটিই আমার চাওয়া,’— বলেন গণপূর্তের ওএসডি হওয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘র্যাব সদর দফতরের কাজের টেন্ডার আহ্বানের সময় দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইমলাম। তিনি অধিদফতরটির প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। তাকে কৌশলে গণপূর্ত ঢাকা সার্কেল-১-এ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মো. সাহাদাত হোসেন এ ষড়যন্ত্র করছেন।’
অধিদফতরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মো. সাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাহাদাত হোসেনের তদবির পালন করার জন্য ঢাকা সার্কেল-১-এর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গণপূর্ত অধিদফতর কর্মকর্তাদের মতে, উৎপল কুমার দে দক্ষ, যোগ্য ও পরিশ্রমী একজন কর্মকর্তা। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উৎপল কুমারকে ওএসডি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীমের দেওয়া ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অথচ তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের মন্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
র্যাব সদর দফতরের টেন্ডারের সময় এবং উৎপল কুমারের যোগ দেওয়ার সময়ের কিছু নথি সারাবাংলার হাতে এসেছে। ওইসব নথিতে দেখা যায়, র্যাব সদর দফতরের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয় গত বছরের ৫ জুন। এই সময়ের টেন্ডার নিষ্পত্তির চেয়ারম্যান ছিলেন গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প ও বিশেষ প্রকল্পের (পিএনএসপি) বর্তমান কর্মকর্তা ড. মঈনুল ইসলাম।
প্রচলিত বিধি অনুযায়ী, প্রকল্পের দরপত্র গণপূর্ত ঢাকা সার্কেল-৩ থেকে আহ্বান ও তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত জোন থেকে মূল্যায়ন দেওয়ার কথা। র্যাব সদর দফতরের কাজের টেন্ডার গণপূর্ত ঢাকা সার্কেল-৩-এর অধীনে। কিন্তু নিয়মনীতি না মেনে বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োজিত ড. মইনুল ইসলাম ও তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে অতিরিক্ত কমিশন আদায়ের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের (সদর দফতর) থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। অথচ উৎপল কুমার দে ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের দায়িত্ব পেয়েছেন গত বছরের ২৬ আগস্ট। জি কে শামীমের মালিকানাধীন জি কে বিল্ডার্সের কাজের ৯৯ ভাগ কাজ তার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ওয়ার্ক অর্ডার পায়।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন ক্ষমতা খাটিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিয়ে উৎপল কুমার দে’ কে ওএসডি করিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সহিদুল্লাহ খন্দকারের মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে উৎপল কুমার দে’ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে পুনরায় বহাল করা হবে। অন্যদিকে জড়িত যারাই হোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কেলেঙ্কারি গণপূর্ত অধিদফতর ঘুষ জি কে শামীম প্রধান প্রকৌশলী