৪ বছরেও শেষ হয়নি তাভেলা হত্যার বিচার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:০৬
ঢাকা: ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হলো শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। ২০১৫ সালের এই দিনে রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাভেলা। ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলায় বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। খুব শিগগিরই এই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও বিচারের সবশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের শুনানি হবে। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে যাবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রত্যাশা, এ বছরের শেষ দিকে মামলার রায় হতে পারে।
এ বিষয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাভেলা সিজার হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এরপর চার্জশিট দাখিলকৃত আরেক তদন্ত কর্মকর্তা এবং মামলার বাদী ইতালি নাগরিকের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আর এর মধ্য দিয়েই সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্তি ঘটবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ মধ্য দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন আদালত। এ মামলার সকল দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’
মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির রহমানের জেরা অব্যাহত রয়েছে৷ তার জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী ৯ অক্টোবর জেরার জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন প্রকৌশলী শেখ এ জেড এম ফয়সাল মাহমুদ ও তৌফিকুর রহমান সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতকে জানান, তাবেলা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই সাক্ষীতে বৈরী ঘোষণা করেন বিচারক।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে গুলশান এভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউজের দক্ষিণের দেয়াল ঘেষা ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাভেলা সিজারকে গুলি করে। ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়।
তবে ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়।
এর পর গত ২০১৬ সালের ২৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী।
একই বছরে ২৪ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেন। ওই সময় আদালত এ মামলায় বিএনপি নেতা কাইয়ুম ও সোহেলসহ দুজনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
অভিযোগপত্রে থাকা অন্য আসামিরা হলেন- কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল।
আসামিদের মধ্যে তামজিদ আহমেদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল, মতিন ও শাখাওয়াত আদালতে বিভিন্ন সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে কাইয়ুম ও সোহেল পলাতক। এছাড়া মতিন জামিনে এবং বাকি চার আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউজের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার জায়গায় তামজিদ গুলি করে তাভেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।