ত্রাণের টাকায় যাতায়াত খরচ করেন মন্ত্রী-জনপ্রতিনিধিরা: টিআইবি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:০২
ঢাকা: এ বছর দেশের ২৮ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই ত্রাণের টাকায় মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের যাতায়াতের খরচ মেটানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য তুলে ধরেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্যায় দুর্গম এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের যাতায়াতের খরচ দেখানো হয়ছে ত্রাণের টাকায়। এর মধ্যে একজন মন্ত্রীর যাতায়াত খরচও রয়েছে। তবে সেই মন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের গবেষণার অংশ । এক্ষেত্রে নাম প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে— এমন তথ্য প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ, স্বজনপ্রীতি, ত্রাণের চাল কম দেওয়া, একই পরিবারকে একাধিকবার ত্রাণ দেওয়া ছাড়াও কেউ অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করলে তাকে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায্যতা ও জনঅংশগ্রহণের ঘাটতির পাশাপাশি বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের সার্বিক তদারকিতে দুর্বলতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, কিছু এলাকায় যেখানে মাথাপিছু চাল দেওয়ার কথা ছিল ১০ কেজি, সেখানে দেওয়া হয়েছে দুই থেকে তিন কেজি। আবার কোথাও ৮ কেজিও দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় অধিক ক্ষতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে আত্মীয় ও রাজনৈতিক সমর্থকদের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। আবার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে একই পরিবার বা ব্যক্তিকে একাধিকবার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্যায় সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এলাকার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ না করেই পরিকল্পনা প্রণয়ন, বন্যার আগাম পূর্বাভাস জনগণকে জানানোর উদ্যোগ না নেওয়া, প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকার কারণে দুর্গম এলাকার সাধারণ জনগণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট ও উদ্ধার তৎপরতা না থাকার কারণে পানির মধ্যে কয়েকদিন দাঁড়িয়ে কাটাতে হয়েছে। ফলে গবাদি পশু অল্প দামে বিক্রি করতে হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের চেয়েও ভয়াবহ ছিল। ১৯৮৮ সালে যমুনায় বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়, এবার ১৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিছু উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ছিল।
তিনি বলেন, এবার ২৮টি জেলায় বন্যার বিস্তৃতি ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও সিলেট। এবার সরকারি হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ১০৮ জন আর বেসরকারি হিসেবে তা ১১৯ জন।