Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থেমে আছে সুরের জাদুকর শচীন কর্তার বাড়ির সংস্কার কাজ


১ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:০০

কুমিল্লা: কারো কাছে তিনি শচীন দেব বর্মণ, কারো কাছে এস ডি বর্মণ, কেউ কেউ ডাকতেন শচীন কর্তা বলে। বাংলা গানের সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রের আজ জন্মদিন। ১৯০৬ সালের পহেলা অক্টোবর ত্রিপুরার মানিক্য রাজপরিবারে নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ ও নিরুপমা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেব বর্মণ। ডাক নাম ডালিম কুমার। মা নিরুপমা দেবী ছিলেন মণিপুরি রাজবংশের মেয়ে।

ত্রিপুরার মানিক্য রাজপরিবার বাঙালির শিল্প সংস্কৃতির ধারক। সেই পরিবারে সংগীত, নাটক, কাব্য, চিত্রকলাসহ সংস্কৃতির বিবিধ চর্চা বহুকাল ধরে। কুমিল্লার সেই বাড়িতে রয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম, হিমাংশু দত্ত, অজয় ভট্টাচার্যের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতি। সেই ধারার সবটাই পেয়েছিলেন তিনি। রাজ ঐতিহ্য ও প্রাসাদ সংস্কৃতির যাবতীয় পারম্পার্য ভেঙে বাংলার পল্লীগীতির হাত ধরে তিনি তৈরি করেন এক ভিন্ন পরম্পরা।

বিজ্ঞাপন

ত্রিপুরার টিপরাই বাঁশি দিয়ে তার সংগীত জীবনের শুরু। ভাঙাস্বর, মুরকি, খোটকি খুব সুন্দরভাবে ধরা দেয় এই বিশেষ বাঁশিতে— যা অন্য বাঁশিতে সম্ভব না। বাল্য ও কৈশোরের প্রেম এই বাঁশিকে তিনি কোনোদিন ভোলেননি। তাই এমন গান তার কমই আছে যেখানে বাঁশির প্রয়োগ হয়নি। বাঁশি শব্দের ব্যবহারও তার বহু গানে রয়েছে।

শচীন কর্তাকে পূর্ব বাংলায় হাউলি বা ‘হাভেলি কর্তা’ বলেও ডাকতেন অনেকে। আগরতলা থেকে ফেরার পথে একবার নৌকায় চড়েছেন শচীন দেব বর্মণ। আকাশে চাঁদ, ভাটির টানে নৌকা আস্তে আস্তে চলছে। এমন সময় মাঝি গলা ছেড়ে গান ধরেছেন— ‘ওরে সুজন নাইয়া…’। গান শেষ হলে শচীন কর্তা প্রশ্ন করলেন, ইডা কার গান তুমি জানোনি? মাঝি উত্তর দেন, জানি। আমরার হাউলির কর্তার গান। কর্তা আবারও প্রশ্ন করেন, তুমি তারে দেকছোনি? না, দেকছি না। দেকা পাইলে পাও জড়াইয়ে ধইরে কইতাম— কী গলাই না পাইচেন কর্তা! মনে হইতাছে, গলার মধ্যে যেন ককিল হাঁইকা থুইছে। বাইচ্চা থাকেন কর্তা।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত শচীন দেব বর্মণের বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও মাঝ পথে থেমে যায়। ২০১৫ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের বাড়ি সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কুমিল্লার জেলা প্রশাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বাড়িটির মূল কাঠামো ঠিক রেখে আদর্শ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। প্রথম পর্যায়ে বাড়িটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সংস্কার কাজ শুরু হওয়া পরে গত দুই বছর ধরে বাড়িটি এভাবেই পড়ে আছে। আমরা চাই বাড়িটির সংস্কার কাজ আবার শুরু হোক। কুমিল্লায় শচীন মেলা হয়, এবারও হবে। কুমিল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাই, এই বাড়িকে ঘিরেই যেন মেলার আয়োজন করা হয়। মানুষ যেন জানতে পারে এটা তার বাড়ি। তার স্মৃতি আমরা ধরে রাখতে চাই।

এসময় তারা শচীন দেব বর্মণ সংস্কৃতি কেন্দ্র ও জাদুঘর এবং গবেষণাগার নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন। তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যেন বাড়িটিতে আরও সংস্কার করা হয়। এখানে একটি শচীন কমপ্লেক্স করা হবে, সেই কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। আমরা বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য বলেছি। এখানে জাদুঘর নির্মাণের জন্য লোকবল নিয়োগের বিষয় রয়েছে, আমরা সে বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি।

শচীন দেব বর্মণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর