Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অকৃত্রিম এক বন্ধু হারাল বাংলাদেশ


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৫৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, পাকিস্তানের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লাহোরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আসমা জাহাঙ্গীরের বাবা গোলাম জিলানী ছিলেন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তি দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখেন তিনি। এজন্য কারাবরণ করতে হয় তাকে। আসমা জাহাঙ্গীরের বাবা সরকারি চাকরি শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে।

২০১৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তার মধ্যে যে ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি ছিলেন, তাদের একজন মালিক গোলাম জিলানী। বাবার পক্ষে পুরস্কার নিতে ওই বছর ঢাকায় আসেন আসমা জাহাঙ্গীর। বাবার মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও আত্মিক সম্পর্ক ছিল আসমা জাহাঙ্গীরের।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন নিউজ জানিয়েছে, আসমা জাহাঙ্গীর ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

পরিবারের বরাত দিয়ে ডন জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আসমা জাহাঙ্গীরকে লাহোরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আসমা জাহাঙ্গীর পাকিস্তানের প্রথম নারী আইনজীবী যিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসসিয়েশনে সদস্য ছিলেন।পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। নারী অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত হিসেবেও কাজ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিচারিক সংস্কারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন আসমা জাহাঙ্গীর। পাকিস্তানের উইমেন একশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন ৬৬ বছর বয়সী এই মানবাধিকারকর্মী।

মানবাধিকারকর্মী আসমার মরদেহ লাহোরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে তার শেষকৃত্যের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। বিদেশ থেকে তার সন্তানেরা দেশে ফিরে এলে তাকে সমাহিত করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে।

১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে লাহোরে জন্ম নেন আসমা জাহাঙ্গীর। কিনাইআর্ড কলেজ থেকে স্নাতক এবং পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি লাহোর হাইকোর্টে যোগ দেন। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শনের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

২০০৭ সালে পাকিস্তানে আইনজীবীদের ঐতিহাসিক আন্দোলেন সক্রিয় ভূমিকা ছিল আসমা জাহাঙ্গীরের। ওই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে গৃহবন্দী করা হয়।

এ ছাড়াও জীবদ্দশায় তিনি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাকিস্তান সরকারের দেওয়া হেলাই-ই-ইমতিয়াজ, সিতারা-ই-ইমতিয়াজ  এবং ইউনেস্কো পুরষ্কারসহ বিভিন্ন পুরষ্কার পেয়েছেন।

আসমা জহাঙ্গীরের মৃত্যুতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার ও অন্যান্য আইনজীবীরা গভীর শোক প্রকাশ ও তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

আসমা জাহাঙ্গীরকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ত্রাণকর্তা উল্লেখ করে, পাকিস্তানের আরেক নারী  শিক্ষা ও মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘হৃদয় বিদারক ঘটনা যে আমরা আসমা জাহাঙ্গীরকে হারালাম’। এছাড়াও তিনি লিখেছেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও অক্সফোর্ডে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিলো। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, তিনি আর নেই। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় তার সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় হবে তার প্রতি যথাযত সম্মান প্রদর্শন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমআই/একে

 

 

 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর