খাতুনগঞ্জে অভিযান: ব্যবসায়ীদের মুচলেকা, কমলো পেঁয়াজের দাম
১ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভারতের রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর ‘এক রাতে’ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের পরপরই খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এই অভিযান চলার একপর্যায়ে আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা প্রশাসনের কাছে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখার অঙ্গীকার করেছেন। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পেঁয়াজের বাড়তি দাম না নেওয়ার বিষয়ে মুচলেকাও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) দিনভর খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কা্ট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম।
অভিযানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার আমদানিকারকদের সঙ্গে চট্টগ্রামের আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা মিলে সিন্ডিকেট গড়ে বাজার অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পেয়েছেন। আমদানি মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রিরও প্রমাণ স্বচক্ষে দেখেছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকে পেঁয়াজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে ফেলা হয়েছে। এক রাতের মধ্যে পেঁয়াজের দাম এত বেড়ে যাবার পক্ষে কোনো যুক্তি ব্যবসায়ীরা দেখাতে পারেননি। মূল্যতালিকায় লিখেছে একরকম, বিক্রি করছে তার চেয়ে বেশি দাম্। এক ধরণের অরাজক পরিস্থিতি। অভিযানের পর বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কথা দিয়েছেন, এই স্থিতিশীল পরিস্থিতি তারা ধরে রাখবেন। সেটা না করলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল আরও বলেন, ‘প্রথমদিন আমরা তাদের সতর্ক করেছি। আড়তদার সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মুচলেকা দিয়েছেন। অভিযানের শেষদিকে যে স্থিতিশীল দামে বিক্রির কথা তারা আমাদের দিয়েছেন, সেই দামে বিক্রি তারা অব্যাহত রেখেছেন কি না সেটা আমরা দেখব।’
পেঁয়াজের আড়ত মেসার্স আবদুল আউয়ালে পেঁয়াজের বিক্রয়মূল যাচাই করেন ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল। সেখানে দেখা যায়, একরাতের ব্যবধানে তার পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তারা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ৫২ টাকায়। পরদিন সোমবার বিক্রি করেছে ৯০ টাকায়। মঙ্গলবার অভিযানের আগ পর্যন্ত ৯০ থেকে ১০০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি গত ১১ সেপ্টেম্বর একই পেঁয়াজ ৪২ টাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ৫৬ টাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ৬০ টাকা এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ৫৮ টাকায় বিক্রি করেছিল।
শাহজালাল ট্রেডার্স নামে আরেকটি আড়তেও গত রোববার ৬০ টাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু পরদিনই তারা পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা করে দেয়। শাহজালাল ট্রেডার্স ২৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ৩০২ বস্তা পেঁয়াজ এনেছে। সেই পেঁয়াজ প্রতিকেজির ক্রয়মূল্য পড়েছে গাড়িভাড়াসহ ৫২ টাকা। সেই দামে কেনা পেঁয়াজই মূলত আড়তে আছে। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পুরনো দামে কেনা সেই পেঁয়াজের দাম তারা প্রতিকেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযানে যাওয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
খাতুনগঞ্জের আরেক বড় পেঁয়াজের আড়ত মেসার্স হাজী অছিউদ্দিন সওদাগর। অভিযানের সময় সেখানে আমদানি ও পরিবহনের নথি যাচাই করে সংশ্লিষ্টরা দেখেন, সোমবার তাদের আড়তে মায়ানমারের পেঁয়াজ এসেছে। টেকনাফের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চৌধুরী ট্রেডার্স তাদের পেঁয়াজ সরবরাহ করেছে। গাড়িভাড়াসহ প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৪২ টাকা। সেই পেঁয়াজ তারা বিক্রি করছে ৭৫ টাকা থেকে ৮৯ টাকায়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিষ্ঠান তিনটিকে স্বাভাবিক দামে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশনা দেন। এছাড়া বাগদাদী করপোরেশন ও এসএন ট্রেডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে একই কারণে সতর্ক করা হয়। মূল্যতালিকায় চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় মেসার্স খাজা ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মূলত খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের রপ্তানি বন্ধের প্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বলা হয়।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার থানা রোডের মেসার্স দীপা এন্টারপ্রাইজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবনগরের মের্সাস টাটা ট্রেডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই সিন্ডিকেটই মূলত পেঁয়াজের বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে।
আড়তদারদের কয়েকজনও বলেছেন, সাতক্ষীরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমদানিকারকদের চাপেই মূলত তারা পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন।