ডেঙ্গু ‘নিয়ন্ত্রণে’ তবে প্রতিরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে
১ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৩৯
ঢাকা: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত আগস্ট মাসে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। চলতি বছরের শুধু আগস্ট মাসেই ৫২ হাজার ৬৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা ২০০০ থেকে ২০১৮—এই ১৯ বছরের ডেঙ্গু রোগীর চেয়ে ২ হাজার ৪৮৮ জন বেশি।
এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির আশংকা করা হলেও এই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭ হাজার ৭৫৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭১ জন নতুন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৬ জন ভর্তি হলেও ঢাকার বাইরে ২৬৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এসব তথ্য জানান।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামগ্রিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে বলা যেতে পারে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের বছর ব্যাপী কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ডিন ও মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে এটা অবশ্যই ভালো একটা সংবাদ। বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমরা বলতে পারি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে এতে রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে শীতের আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকেই যায়। এখন বৃষ্টি হচ্ছে আর তাই পানি জমার সম্ভাবনাও থেকে যায়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। ভবিষ্যতেও আমাদের বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আমরা বলতে পারি ডেঙ্গু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে যেহেতু এখনও বৃষ্টি হচ্ছে তাই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এটা বলা যায় না। আরেকটা পিক মোমেন্ট আসার সম্ভাবনা হয়তো নেই তবে সেই সম্ভাবনা যাতে আর না দেখা দেয় সেজন্য আমাদের বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এই কর্মসূচি কোনো ভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকেও মনিটরিং করতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে বলতে পারি না তবে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত বলা যেতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনো উঠা নামা করছে। বর্তমান পরিস্থিতি আগের চাইতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে তবে এটা শঙ্কামুক্ত বলা যায় না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৩২৪ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৮৬ হাজার ৬১৬ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৪৭২ জন রোগী। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৪৭ জন রোগী। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯২৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ২৩ জন, এসএমসি ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আট জন ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সাত জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে এক জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন রোগী।
পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ৬৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন ও খুলনা বিভাগে ৯৮ জন, রংপুর বিভাগে সাত জন, রাজশাহী বিভাগে ১৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৪৬ জন, সিলেট বিভাগে পাঁচ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর)। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি ১৩৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করেছে। তার মধ্যে ৮১ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে।