প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে আলোচনায় তিস্তা-রোহিঙ্গা
২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১২
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়া দিল্লি যাচ্ছেন বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর)। সফরে আগামী শনিবার (৫ অক্টোবর) দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শনিবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৫ অক্টোবর বৈঠকের পর মূলত যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে এ পর্যন্ত সাত থেকে আটটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। তবে, এ সংখ্যা ১০টিতেও উন্নীত হতে পারে।
হাইকমিশনার বলেন, তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো ধারণা পোষণ করতে পারছি না।
ভারতের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এনআরসি প্রশ্নে বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন না হতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এটি তাদের ইস্যু, তাদেরকেই এটি হ্যান্ডেল করতে দিন। এনআরসি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।
হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ভারতীয় শাখা ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক ফোরাম-২০১৯-এ যোগ দেবেন। ওই ফোরামে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তুলে ধরবেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথাও উল্লেখ করবেন। পাশাপাশি ভারতের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাবেন।
এছাড়া তিনি ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ নেতাদের সঙ্গে শুক্রবার যৌথভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঐতিহাসিক হায়দারাবাদ হাউজে। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে আয়োজিত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
একই দিন তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরদিন ৬ অক্টোবর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি
বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-২০৩০) প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ৩ অক্টোবর সকাল ৮টায় দিল্লির উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় নয়া দিল্লি পৌঁছাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন হোটেল তাজ প্যালেসের দরবার হলে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে বাংলাদেশের ওপর কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি ডায়ালগে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী একইদিন বাংলাদেশ হাইকমিশনের মৈত্রী হলে এক সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশ হাউজে তার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনার এই নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৪ অক্টোবর ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন। ভারত সফররত সিঙ্গপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ে কিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
৫ অক্টোবর শনিবার ঐতিহাসিক হায়দারাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন কয়েকটি বিনিময় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। দুই প্রধানমন্ত্রী হায়দারাবাদ হাউজ থেকে যৌথভাবে কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
এর আগে, একইদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেখ হাসিনা হায়দারাবাদ হাউজে আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় যোগ দেবেন এবং পরিদর্শক বইতে সই করবেন।
সফরে ভারতের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। শ্যাম বেনেগাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজিত বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ২০২০-২১ শেষ হওয়ার আগেই মুক্তি পাবে।
সফর শেষে শেখ হাসিনা ৬ অক্টোবর বিকেলে দেশের উদ্দেশ্যে নয়া দিল্লি ত্যাগ করবেন। বাসস।
ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিট ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ডব্লিউইএফ তিস্তার পানিবণ্টন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর রোহিঙ্গা সংকট সমঝোতা স্মারক হাসিনা-মোদি বৈঠক