ডিজিটাল হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা
২ অক্টোবর ২০১৯ ১০:২৫
ঢাকা: ডিজিটাল হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা। এজন্য ‘কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরিকল্পনা কমিশন। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উন্নয়ন প্রকল্প ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে টেকনিক্যাল কমিটির দ্বিতীয় সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন কার্যক্রম বিভাগের প্রধান মো. খলিলুর রহমান। ২৪ সেপ্টেম্বর ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মো. খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, ডিজিটাল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে টাইম ওভার রান এবং কস্ট অভার রান কমে আসবে। তাছাড়া পরিবেশ বান্ধব হবে। কেননা প্রকল্পটির মাধ্যমে পেপারলেস হয়ে গেলে কাগজের ব্যবহার কমে যাবে। ফলে কাগজ তৈরির জন্য গাছ কাটাও কমবে। এজন্য পরিবেশবান্ধব বলা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির অগ্রগতি অনেক ভালো। আগামী ডিসেম্বর মাসে সংশোধিত এডিপি তৈরির সময় ১০টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পাইলট ভিত্তিতে ডিজিটাল করা হবে।’
টেকনিক্যাল কমিটির সভায় যুগ্মপ্রধান (কৃষি ও সমন্বয়) ও প্রকল্প পরিচালক জানান, এই প্রকল্পটি উন্নয়ন বাজেটে সরকারি অর্থব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য কার্যক্রম বিভাগে নতুন ডাটাবেইজ ও রিপোর্টিং সিস্টেম স্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ওয়েবভিত্তিক এডিপি/আরএডিপি প্রণয়ণের জন্য সিস্টেমটি তৈরির জন্য আইবিসিএস প্রাইম্যাক্স সফটওয়্যার বিডি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান এডিপি আরএডিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এএমএস) সফটওয়্যারের ডেভেলপমেন্ট ফেইজ সম্পন্ন করেছে। এই সফটওয়্যারটি ২টি পর্যায়ে পাইলটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। পাইলটিং এর সময় যে সকল মতামত পাওয়া গেছে বর্তমানে তা সংযোজন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের বিদ্যমান ডাটাবেজের সঙ্গে ডিজিটাল লিংকেজ স্থাপনের কাজ চলমান আছে বলেও জানান তিনি।
যুগ্মপ্রধান আরও বলেন, ‘এডিপি আরএডিপি প্রণয়ণের সময় প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অর্থবিভাগের আইবিএএস অথবা আইএমইডির পিএমআইএস হতে এএমএস সফটওয়্যারটিতে এ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যয়ের তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।’
এ বিষয়ে এটুআই প্রতিনিধি বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে যত ডাটাবেজ ও সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে তাদের মধ্যে যেন প্রয়োজনীয় লিংকেজ ও ইন্টারফেজ থাকে তা নিশ্চিত করা এবং সরকারি সকল অ্যাপ্লিকেসনে একটি কমন ইউজার পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এএমএস সফটওয়্যারটি সরকারের উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহৃত হবে এবং এর সাথে সরকারি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ডাটাবেজ সিস্টেমের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় লিংকেজ স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। এএমএস সফটওয়্যারটি বর্তমানে ডেভলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে তাই অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে ইন্ট্রিগেশন বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা একসেবা কাঠামোর আওতায় সিংগেল সাইন অন (এসএসও) এর সাথে ইন্ট্রিগেশন করার ক্ষেত্রে এটুআই এর পক্ষ হতে প্রয়োজন সাপেক্ষে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
সিস্টেম গ্যাপ অ্যানালাইসিস বিষয়ে এটুআই প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত এটুআই এর সহযোগিতায় ২০১৯ সালের ১৫ থেকে ২০ এপ্রিল সাভারে অনুষ্ঠিত ইন-হাউজ ট্রেনিংয়ে ৪টি সফটওয়্যার নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় এবং এএমএসের সঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের আওতায় অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এই সুপারিশগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
পরিকল্পনা বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ‘সফটওয়্যারটির প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট, ইউজার ম্যানুয়াল, ভিডিও ম্যানুয়াল ও এফএকিউ যথাযথভাবে সমন্বয় ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’
এটুআই এর প্রতিনিধি ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রতিনিধির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এএমএস সফটওয়্যারটিকে অধিকতর উন্নয়নের জন্যও এই সফটওয়্যারের বিষয়ে মতামত সংগ্রহের জন্য ডাটাবেইজ আর্কিটেকচার, সিস্টেম রিকুয়্যারমেন্টস স্পেফিকিশন (এসআরএস) সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টস লাইফ সাইকেল (এসডিএলসি), সফটওয়্যার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এসডিডি) ডকুমেন্টগুলো এটুআই ও পরিকল্পনা বিভাগে আইটি সেলে পাঠানো যেতে পারে।’
ডেপ্লয়মেন্ট ও টেস্টিং বিষয়ে এটুআই এর প্রতিনিধি বলেন, ‘সফটওয়্যারের প্রণয়নের ধাপগুলোর ওপর নির্ভর করে তার টেস্টিং প্রক্রিয়া নির্ধারিত হয়। একটি সফটওয়্যারের ফাংশনাল টেস্ট অ্যান্ড নন ফাংশনাল টেস্টেও জন্য প্ল্যান ও পরীক্ষার পরিবেশ নির্ধারণসহ পরীক্ষা কার্যকর করা হলে পরবর্তী সময়ে সমস্যার সম্ভাবনা কম থাকে।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এএমএস সফটওয়্যারের জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের এরই মধ্যে দুই ধাপে পাইলটিং সম্পন্ন হয়েছে। সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে পাইলটিং থেকে প্রাপ্ত মতামতগুলো নিয়ে সিস্টেমটির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এই কাজ শেষ হওয়ার পর ডেপ্লয়মেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হবে। চুক্তি অনুযায়ী সফটওয়্যারটি চালুর আগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে টেস্টিংয়ের সংস্থান রাখা হয়েছে।’এই পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে বলেও জানান তিনি।