প্রকাশ্যে শরীরে আগুন দেওয়া লিজা মারা গেছে
২ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৩২
ঢাকা: বিয়ের পর স্বামীর পারিবারের স্বীকৃতি না পেয়ে প্রকাশ্যে নিজের শরীরে আগুন দেওয়া রাজশাহীর লিজা রহমান (১৯) মারা গেছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। লিজার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপজ ডা. নাসির উদ্দিন।
ডা. নাসির উদ্দিন জানান, লিজার শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত একটার দিকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়। সেদিন থেকেই তাকে হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়।
এর আগে গত (২৮সেপ্টেম্বর) শনিবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা থেকে কিছুটা দূরে নিজের গায়ে আগুন দেয় কলেজ শিক্ষার্থী লিজা রহমান। এর পর ওইদিন রাতেই তাকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
লিজার বাবা মো. আলম মিয়া জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। গ্রামেই বাঁশের ব্যবসা করেন তিনি। দুই মেয়ের মধ্যে লিজা ছিল ছোট। বড় বোন রানীর বিয়ে হয়ে গেছে।
আলম আরও জানায়, লিজার যখন তিন মাস বয়স তখন তার মা মফেলা বেগম মারা যায়। তখন তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েন। কোনো উপায় দেখে এক পর্যায়ে ওই গ্রামের আব্দুল লতিফের কাছে দত্তক দেন লিজাকে। সেখানেই বড় হতে থাকে লিজা। সেখানে লতিফের এক ছেলে সন্তান ছিল। তার নাম সিহাব আহমেদ। বর্তমানে লিজাকে দত্তক নেওয়া লফিত মাদক মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
বার্ন ইউনিটে কথা হয় লিজার ভাই সিহাব আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লিজা তার ছোট। তিন মাস বয়সে বাবা তাকে দত্তক নেয়। লিজা এসএসসি পাস করার পর রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। লিজা এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।’
সিহাব জানায়, কলেজে পড়তে এসে পরিচয় হয় রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচল উপজেলার খান্দুরা গ্রামে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে তারা পরিবারের অগোচরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাইবান্ধায় গিয়ে কোর্টে বিয়ে করেন। এরপর রাজশাহীতে বাসা ভাড়া নেয় তারা। কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টা জানাজানি হলে বাগড়া দেয় ছেলের পরিবার। কয়েক দফা সাখাওয়াতের বাড়িতে গেলে লিজাকে তাড়িয়ে দেওয়া। সাখাওয়াত কিছুদিন লিজার পক্ষে থাকলেও পরিবারের চাপে সেও কয়েক পর তাকে ছেড়ে চলে যায়। সেই দুঃখেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
রাজশাহীর শাহ মখদুম জোনের পুলিশের ডিসি হেমায়েতুল ইসলাম জানায়, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লিজা থানায় এসেছিল মামলা করতে। বিয়ের পর স্বামীর পরিবার মেনে নিচ্ছে না। এর আগেও দুবার বিয়ে করেছিল লিজা। সে বিয়ে টিকে নাই। বিষয়গুলো শুনে তাকে থানার পাশে ভিকটিম সাপোর্টে পাঠানো হয়। সেখানে কাউন্সিলের মাধ্যামে পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য তাকে বলা হয়। ছেলের পরিবারকে ডেকে মীমাংসার বিষয়টাও তাকে বলা হয়। তখন সে রাজি হয়।
ডিসি হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর লিজা বলে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। এই বলে সে ভিকটিম সাপোর্টের কিছুটা অদূরে গিয়ে ব্যাগের ভেতর থাকা বোতলের কেরোসিন শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয় দেয়। এবং পর মুহূর্তে সে নিজেই বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে। পরে আগুন নিভিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পুলিশের সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্সে করে লিজাকে ঢামেকে পাঠানো হয়।’