দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কোনো ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী
২ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:০২
ঢাকা: চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দল, আত্মীয়, পরিবার বলে কিছু নেই, সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও-এ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সে যেই হোক না কেন, এখানে দল, মত আত্মীয় পরিবার বলে কিছু নেই। যারাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
‘আর আমার কথা হচ্ছে, আমার কিন্তু হারাবার কিছু নেই। আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আমি এক দিনে সব হারিয়ে সেই বেদনা, সেই কষ্ট-শোক বুকে নিয়েও ফিরে আসাকেই কর্তব্য বলে মনে করেছি। যেটা হচ্ছে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই হচ্ছে আমার একমাত্র কর্তব্য। তাই জীবনকে বাজি রেখেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট নিয়েছি। প্রকল্প গ্রহণ এবং উন্নয়ন বাজেটেও ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নেওয়া বা বাস্তবায়ন করার সময়, আমরা মাঝে মাঝে দেখি যে, উইপোকা খেয়ে ফেলে। এখন এই উইপোকাগুলি ধরা আর সেগুলোকে বিনাশ করার চেষ্টা করছি। আর জনগণের কষ্টার্জিত প্রতিটি টাকা যেন সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার হয়, তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সেবা উদ্বোধন
এদিকে, উৎক্ষেপণের এক বছর চার মাস পর বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার শুরু হল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এতে করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার খরচ কমে যাবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর আয় করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাটকোর প্রেসিডেন্ট অঞ্জন চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক রায় চৌধুরী। বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাথে বাণিজ্যিক চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী অ্যাটকোর প্রেসিডেন্ট অঞ্জন চৌধুরীর কাছে চুক্তিপত্রগুলো হস্তান্তর করেন। এছাড়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যাদের একটা অর্থনৈতিক নীতিমালা আছে, আমাদের দলীয় কিছু সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণাপত্র আছে যে আমরা ভবিষ্যতে দেশটাকে কিভাবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই পদক্ষেপ হিসেবেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণাটি দিয়েছিলাম। ডিজিটাল শব্দটা, এটা আমার জানার কথা না। কারণ, আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। এই শব্দটা দিয়েছিল আমাকে সজীব ওয়াজেদ জয়। সে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং’এ গ্র্যাজুয়েট, পরবর্তীতে আবার সে হার্ভার্ডে মাস্টার্স ডিগ্রীও করেছে।’
আমরা যখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বললাম তখন অনেকেই হাসাহাসি বা বিদ্রুপ করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে দেশ চালাচ্ছি। আমরা ক্ষমতায় আছি পাঁচ বছর, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য করব, কিছু টাকা পয়সা বানাব, আর আমি চলে যাব, সেটা না।’ এ লক্ষ্যে তার সরকার বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনসহ থ্রিজি-ফোরজি সেবার বিস্তার করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে ইন্টারনেট সেবা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য কাজ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর কথা সকলেই জানি, এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। কারো কাছে হাত পেতে চলব না। আজকে আমরা যে বাজেট দেই তার পুরো অর্থ নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। বিদেশি কিছু ঋণ সহযোগিতা থাকে সেটা মাত্র ১০ থেকে ১৪ শতাংশের বেশি না। বাকিটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করার মত সক্ষমতা অর্জন করেছি। এই ধারাবাহিকতাটা যেন বজায় থাকে সেলক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
উন্নয়ন প্রকল্প দুর্নীতি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা