শোকজের জবাবে ক্ষমা চাইলেন আওয়ামী লীগ নেতারা
৩ অক্টোবর ২০১৯ ১১:০৪
ঢাকা: এ বছর মার্চ ও জুনে পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা প্রার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশ কেন্দ্র থেকে পাঠানো শোকজ নোটিশ বা কারণ দর্শানো চিঠির জবাব দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৭৭ বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ১৪৫ জনের জবাব এরই মধ্যে পৌঁছে আওয়ামী লীগ দফতরে। ডাকযোগে পাঠানো জবাবে তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। একইসঙ্গে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পেছনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ যেসব ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের যারা ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের নাম-পরিচয়ও উঠে এসেছে চিঠিতে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, শোকজ নোটিশের জবাবে কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের দায়ী করেছেন। দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বছর অনুষ্ঠিত পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আট বিভাগে আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন প্রায় দুইশ জন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে গত ৮ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে ১৭৭ জনকে কারণ দর্শানোর চিঠি ইস্যু করা হয়। জবাব দেওয়ার সময় তাদের সময় দেওয়া হয় ২১ দিন। আওয়ামী লীগ দফতর বলছে, নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে ১৪৫ জনের জবাব জমা পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের দফতর বরাবর পাঠানো ফিরতি চিঠির শুরুতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন উপজেলা নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। পাশাপাশি অভিযুক্তদের কেউ কেউ সশরীরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধও করেছেন।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা যায়, শোকজের জবাব দেওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ৩২ জনের শোকজের জবাব এখনো জমা হয়নি আওয়ামী লীগ দফতরে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিঠি পাননি বলেও জানা গেছে। এখন পর্যন্ত কেউ শোকজের জবাব দিতে বাড়তি সময় চেয়ে আবেদনও করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, যাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই জবাব দিয়েছেন। শোকজের জবাব যারা দিয়েছেন বা এখনও দেননি, তাদের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতা জানান, শোকজের জবাবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাঠানো চিঠিতে অনেক প্রভাবশালী নেতার নাম এসেছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদতদাতা হিসেবে বেশকিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নামও উঠে এসেছে চিঠিতে। এমন প্রায় অর্ধশত নেতার নামের তালিকা আলাদা করা হচ্ছে। এই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চলমান সাংগঠনিক অভিযানে এসব দলীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতারা শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
দলীয় সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর শুধু দলীয় পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের শোকজ করা হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পর্যন্ত পদে থাকা স্থানীয় নেতারা রয়েছেন এ তালিকায়।
প্রসঙ্গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে পাঠানো শোকজ চিঠিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে অভিযুক্ত নেতারা দলীয় পদ থেকে অব্যাহতিসহ দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে, গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর শাস্তি’র সিদ্ধান্ত হয়। তবে বন্যা, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও শোকাবহ আগস্টের কারণে এই কার্যক্রম পিছিয়ে যায়।