Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রোহিঙ্গা-এনআরসি মাথায় রেখে চট্টগ্রামে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা’


৩ অক্টোবর ২০১৯ ১২:০১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) ইস্যু বানিয়ে কেউ যাতে অঘটন ঘটাতে না পারে, সে বিষয়কে সামনে রেখে এবার চট্টগ্রাম জেলায় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেছেন, ‘সুর্নিদিষ্ট কোনো হুমকি বা আশঙ্কা নেই। তবে কোনো কোনো মহল রোহিঙ্গা এবং এনআরসিকে ইস্যু বানিয়ে পূজায় অঘটনের চেষ্টা করতে পারে। জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা থাকবেন এবং গোয়েন্দা তথ্য যারা সংগ্রহ করবেন, তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এটা কেউ করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলায় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা।

এসপি মিনা বলেন, ‘পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীরা বিশেষ করে নারীরা যাতে কোনো ধরনের ইভটিজিং কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার না হন, সেটাকে মণ্ডপকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনেকসময় দেখা যায়, মোটর সাইকেলে করে এসে নারীদের ব্যাগ কিংবা গলার চেইন টেনে নিয়ে যায়। এটা আমরা হতে দেব না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ফেসবুক। রোহিঙ্গা কিংবা এনআরসি নিয়ে ফেসবুকে উসকানি ছড়াতে পারে। হুট করে বিতর্কিত কোনো পোস্ট দিয়ে জনগোষ্ঠীর একাংশকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। এডিট করা ছবি প্রচার করতে পারে। সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটাকে আমরা বড় একটা এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছি।’

২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। এছাড়া সম্প্রতিকালে ভারতের আসামে প্রণীত এনআরসি থেকে বাদ পড়ে ১৯ লাখ নাগরিকের নাম, যাদের ভারত সরকার বলছে বহিরাগত। মায়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর নির্যাতন এবং ভারতের এনআরসি প্রণয়নকে এদেশে সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানানোর চক্রান্ত হতে পারে, এমন শঙ্কা আছে চট্টগ্রামের পুলিশের মধ্যে।

‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই। হুমকি কিংবা আশঙ্কাও নেই। তবে আমরা সতর্ক আছি।’- বলেন এসপি মিনা

জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার ১৬ থানার অধীনে এবার ১৫২০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ১০০টি বেশি। চট্টগ্রামের ১৬ থানার মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি পূজা হচ্ছে রাউজান থানা এলাকায়, ২৩২টি। এছাড়া মীরসরাই উপজেলার মীরসরাই থানা এলাকায় ৩৬টি ও জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ৪৬টি, সীতাকুণ্ড থানায় ৬০টি, সন্দ্বীপ থানায় ২৩টি, হাটহাজারী থানায় ১১৮টি, ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি থানায় ৬২টি ও ভুজপুর থানায় ৪৭টি, রাঙ্গুনিয়া থানায় ১৫৫টি, পটিয়া থানায় ১৮৩টি, বোয়ালখালী থানায় ৮৩টি, চন্দনাইশ থানায় ৯১টি, আনোয়ারা থানায় ১১৪টি, বাঁশখালী থানায় ৮৪টি, সাতকানিয়া থানায় ১১৮টি এবং লোহাগাড়া থানায় ৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে।

বিজ্ঞাপন

এসব মণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে পুলিশ। ১৫ হাজার ২০টির মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ আছে ৩৯৬টি, গুরুত্বপূর্ণ ৪৬২টি এবং সাধারণ ৬৬২টি।

এসপি নুরে আলম মিনা জানিয়েছেন, পাঁচটি স্তরে ভাগ হয়ে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা দেবে জেলা পুলিশ। প্রথম স্তর হচ্ছে মণ্ডপভিত্তিক। অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে দুইজন, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ মণ্ডপে একজন করে পুলিশ সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে। দ্বিতীয় স্তরে পাঁচ থেকে সাতটি মণ্ডপ নিয়ে একটি গ্রুপ দায়িত্বে থাকবে, যার মধ্যে একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবল থাকবে। তৃতীয় স্তরে পুলিশ পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে টিম থাকবে, যারা পিকআপ অথবা মাইক্রোবাসে টহল দেবেন। চতুর্থ স্তরে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারেরা। তারা নিজ নিজ এলাকায় ভাগ হয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে নিরাপত্তা কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। সর্বশেষ স্তরে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশেষ ফোর্স এবং গোয়েন্দা ও বিশেষ শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় টিম থাকবে সার্বিক তদারকির দায়িত্বে।

১৬ থানায় মোতায়েন থাকবে মোট ২৯৫০ জন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ২৭০০ ফোর্স জেলা পুলিশের এবং ২৫০ ফোর্স দিচ্ছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। পুলিশের বাইরে চট্টগ্রামে ১৮ হাজার ২৪০ জন আনসার সদস্য বিভিন্ন মণ্ডপে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন এসপি মিনা।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার সকল সার্বজনীন পূজামণ্ডপ নিয়ে এবার প্রথমবারের মতো তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসপি নুরে আলম মিনা। তিনি জানান, ১৬টি থানার অধীনে ১৬টি আলাদা তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। এতে সকল পূজামণ্ডপের ছবি, ঠিকানা, থানা থেকে দূরত্ব, দ্রুত সেখানে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নির্দেশনা, মণ্ডপের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ও মোবাইল নম্বর আছে।

‘তথ্য বাতায়নের উদ্যোগটা এবারই প্রথম। এই বই থানায় থাকবে। জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে থাকবে। এসপি হিসেবে আমার কাছে থাকবে। জরুরি কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে যাতে মণ্ডপের সার্বিক বিষয় মাথায় থাকে এবং সে অনুযায়ী যাতে নির্দেশনা দিতে পারি, সেজন্য তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে’—বলেন এসপি মিনা।

এসপি আরও বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পূজা শুরুর আগেরদিন থেকে বিসর্জনের সময় পর্যন্ত পুরো জেলায় বিশেষ অভিযান করা হবে। কেউ ইভটিজিং বা ছিনতাইয়ের শিকার হলে কিংবা অন্য কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি উদ্ভবের সম্ভাবনা দেখলে ৯৯৯-এ কল দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রত্যেক মণ্ডপে থানার ওসি থেকে এসপি পর্যন্ত সবার মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলায় আমরা সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পারব।’

দুর্গাপূজা নিরাপত্তা নুরে আলম মিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর