বিনা বেতনে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বীণাপানি বিদ্যাপীঠ
৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:০৮
নেত্রকোনা জেলা সদরের বাংলাবাজারে অবস্থিত দরিদ্র মেধাবী, কোমলমতি শিশুদের মাঝে অবৈতনিকভাবে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বীণাপানি বিদ্যাপীঠ। শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলম, পোশাক বিনামূল্যে প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করে আসছে।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা এবং এনজিও উপদেষ্টা অসীম কুমার রায় ২০১১ সালে বীণাপানি বিদ্যাপীঠ স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যাপীঠে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ আটজন সহকারী শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন। প্রতি শ্রেণিতে ২০ জন করে মোট ১৪০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। আধাপাকা দুইটি ভবনে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়সহ মোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে। মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এ বিদ্যাপীঠে মন্দির ও নিয়মিত খেলাধূলার জন্য খেলার মাঠ রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই বছরের শুরুতে ড্রেস, জুতা, খাতা, কলম, শীতের কম্বল, ছাতা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে। পরীক্ষার ফিস প্রতিষ্ঠান থেকেই দেওয়া হয়। প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাসে দুটি পাক্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ম, ২য় স্থান অধিকারীদের মেধাভিত্তিক বৃত্তি দেওয়া হয়। এ বিদ্যাপীঠটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভালো। পিএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যাপীঠ থেকে ২০১৩ সালে একজন, ২০১৪ সালে ৪ জন, ২০১৫ সালে ৪ জন এবং ২০১৬ সালে ৩ জন, ২০১৭ সালে ৫ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন বৃত্তি পেয়েছে।
বীণাপানি বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষিকা হাফছা আক্তার মনি জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে চলে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অনুরূপ পরিবেশে আরেকটি প্রতিষ্ঠান এলাকায় নেই। যা থেকে ওই শিক্ষার্থী তার পরবর্তী জীবনে উন্নত পরিবেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক আরও নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। পাঠদান, খাতা দেখা, প্রশ্নপত্র তৈরির কাজে প্রচুর শ্রম দিতে হয়। উদীয়মান শিক্ষার্থীদের মেধা ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আরও শ্রেণি বাড়ানো একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।
বীণাপানি বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীণাপানি বিদ্যাপীঠে আরও শ্রেণি বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে এখান থেকে পিএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অনুকূল ও আদর্শ পরিবেশে অর্জন করতে পারে।’
বীণাপানি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অজিত সিংহ জানান, শিক্ষক যদি নিবেদিত হয়, আত্মপ্রত্যয়ী হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠে। এতে বিদ্যালয়ের সুনাম যশও বৃদ্ধি পায়। এভাবেই সম্ভব একটি আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। সরকারিভাবে প্রত্যেকটি প্রাথমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিমূলক মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করি।
বীণাপানি বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অসীম কুমার রায় বলেন, দরিদ্র শিশুদের মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলাই আমার মূল লক্ষ্য। অভাব-অনটনের কারণে যে সব অভিভাবক তাদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হন আমরা তাদের নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।