Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিস্তার পানির খবর নেই, ত্রিপুরায় যাবে ফেনী নদীর পানি?


৪ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৫৮

ঢাকা: দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর বন্ধুত্বের খাতিরে ৫০০ টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর চার দিন পরই ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি বন্ধে নয়া দিল্লির সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে পেয়াজের দাম বেড়েছে চার গুণ, এখনো বইছে সেই ঝাঁঝালো উত্তাপ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন নয়া দিল্লি অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও ফেনী নদীর পানি ইস্যুতে নতুন ঘোষণা আসতে পারে বলে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

আগামীকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় ভারতের হায়দারাবাদ হাউজে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা-নয়া দিল্লি দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন।

আরও পড়ুন- ফেনী নদীর পানি দিয়ে ত্রিপুরার চাহিদা মেটাতে চায় ভারত

ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা বা জলঢাকা, ফেনী ও দুধকুমার বা তরসা— এই সাতটি আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। বিশেষ করে, বাংলাদেশর ফেনী নদী থেকে পানি নিয়ে ত্রিপুরার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করতে চায় ভারত। আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে এই নদীগুলো বিষয়ে বিশেষ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এর আগে, ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফেনী নদীর পানি চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘তিস্তায় পানি এলে ভারত ফেনীর পানি পাবে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ঢাকার ওই শক্ত মন্তব্যের পর এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় প্রকাশ্যে কিছু বলেনি নয়া দিল্লি। বিপরীতে সময় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী ও আস্থার রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়েছে ভারত। যার ফলে ২০১৫ সালে পানি নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। এবারের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে পানি বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসা অনভিপ্রেত কিছু নয়। শুধু তাই নয়, নতুন সিদ্ধান্তে তিস্তা বিষয়ে কিছু না থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু হবে না।

আরও পড়ুন- কী থাকছে ভারতের সঙ্গে পানি বৈঠকে?

শনিবার ঢাকা-নয়া দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের আগে এই বিষয়ে পট তৈরিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং তার আগে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং ঢাকা সফর করে গেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সর্বশেষ ঢাকা সফরে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।’ এরপর গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতি নির্ধারণী ফোরামে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চা শক্তিশালী করতে সামরিক বা অন্য কোনো সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে ভারত।’

ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং ঢাকা সফরে এসে বলেন, ‘দুই দেশের ৫৪টি নদীর মধ্যে সাতটি নদী নিয়ে ঢাকা-নয়া দিল্লি যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নদীগুলো হচ্ছে— মনু, মুহুরী, খোয়াই, ফেনী, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার। এই নদীগুলোর পানি অর্ন্তবর্তীকালীন ব্যবহারের জন্য একটি কাঠামো প্রণয়নে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুন- নয়াদিল্লির আগ্রহে দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার গত ১০ বছরের সম্পর্ক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, উগ্রবাদ-চরমপন্থা-সন্ত্রাস দমনসহ ভারতের আহ্বানে উদারহস্তে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট, তিস্তার পানিবণ্টনের মতো বাংলাদেশের জটিল সমস্যা সমাধানের বিষয়ে এখনও নীরব ভারত। বিভিন্ন সময়েই ভারত স্থল সীমানা চুক্তির উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানান দেয়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলে থাকেন, স্থল সীমানা চুক্তি ভারতই দীর্ঘদিন জিইয়ে রাখে। ওই সমস্যা বাংলাদেশের কারণে তৈরিও হয়নি।

পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি নিয়ে সমাঝোতা হলেও এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন নেই। প্রতিটি সফরের আগে-পরেই দেখা যায়, বাংলাদেশের দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ের প্রেস রিলিজে তিস্তা বিষয়ে আশাবাদ জানানো হয়। অন্যদিকে, ভারতীয় পক্ষে এ বিষয়ে টুঁ শব্দটিও দেখা যায় না।

আরও পড়ুন- পানি-প্রতিরক্ষায় ঢাকার অবস্থান কী, জানাতে পারল না মন্ত্রণালয়

সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সাইড লাইনে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে বৈঠক হয়, সেই বৈঠক নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তার প্রমাণ মেলে। যেমন— ঢাকা-নয়া দিল্লির মধ্যেকার ওই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ভারতীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই উল্লেখ ছিল না। আবার গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তিস্তার কোনো উল্লেখ নেই।

নয়া দিল্লি যাওয়ার আগে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এটা ঠিক যে ২০১১ সালে তিস্তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। আমরা বিষয়টি আবার উঠাব (রেইজ করব)।’

আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: গুরুত্ব পাবে যেসব ইস্যু

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুই দেশের পানি সচিব পর্যায়ের সচিবরা ঢাকায় আলাপ করেছেন। দুই দেশের মধ্যে থাকা সবগুলো অভিন্ন নদীর রূপরেখা তারা তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরেও নিশ্চয় এ বিষয়ে আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে, ইনক্লুডিং তিস্তা।’

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী বা ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ কী চাইবে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, এখানে পানি বিশেষজ্ঞও নেই।’

এমন সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, ‘আসলে এটার আলোচনা শুরু হয়েছে। এটা এখনো ওভাবে শেপ নেয়নি। সুতরাং এত আর্লি কিছু বলা যাবে না। আমার মনে হয়, ফিরে (প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর শেষে) এলে হয়তো কিছু বলা যাবে।’

ঢাকা-নয়া দিল্লি তিস্তা চুক্তি তিস্তার পানিবণ্টন ফেনী নদীর পানি বাংলাদেশ-ভারত হাসিনা-মোদি বৈঠক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর