দুর্গার পদতলে পুষ্পাঞ্জলি
৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৫২
ঢাকা: নিয়ম অনুযায়ী ষষ্ঠীতে হয় বোধন। আর সপ্তমী থেকে শুরু হয় পূজা। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি দেশের প্রধান মন্দির ঢাকেশ্বরীতে। শনিবার সকাল এগারোটার মধ্যেই সপ্তমীর পূজা শেষ হয়েছে এ মন্দিরে। এরপর আরতির থালা থেকে ধোঁয়া মাখা আশীর্বাদ নিয়েছেন দেবী দুর্গার ভক্তরা। বিনিময়ে দেবীর পায়ে পড়েছে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি।
সপ্তমীর পূজা পরিচালনা করেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রণজিৎ চক্রবর্তী। পূজা দেখতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ভিড় জমান সাধারণ মানুষেরা। পুরোহিতের সঙ্গে তারা পূজায় উচ্চারিত সংস্কৃত শ্লোকও আওড়ান। এরপর সবাই মিলে একযোগে করেন প্রার্থনা।
রণজিত চক্রবর্তী বলেন, ষষ্ঠীতে বোধন এরপর সপ্তমীতে শুরু হয় আসল পূজা। এ জন্য আজ সকাল থেকেই ঢাকেশ্বরীর উঠোনে ভক্তদের ভিড় অনেক বেশি। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত পূজা হয়েছে। আজকে দেবীকে ভক্তরা নানান অর্ঘ্য ও অঞ্জলি দিয়েছে। দেবীও ভক্তদেরকে করেছেন আশীর্বাদ।
এদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুক্রবার ভোরে শুরু হয় ষষ্ঠীপূজার আয়োজন। ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দুর্গাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানান ভক্তরা।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। আজ হয়েছে মহাসপ্তমী পূজা। এরপর রোববার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। সোমবার মহানবমী আর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নেবেন দুর্গা।
এ বছর ঘোড়ায় চড়েই জগতের মঙ্গল কামনায় দুর্গা দেবী কৈলাশ থেকে নেমে এসেছেন মর্ত্যলোকে।
দর্শনার্থী লাবণ্য দত্ত বলেন, ‘মায়ের কাছে সপ্তমীর পূজায় এসে আশীর্বাদ চেয়েছি। ফুল দিয়েছি মায়ের পায়ে। কিছু চাওয়া-পাওয়ার দাবি নিয়ে আলাপও হয়েছে আমাদের। মা যেন আমাদের মঙ্গল করেন।’
শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে পূজা দেখেছেন ঢাকা ৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপপ্রচার সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও আসেন ঢাকেশ্বরীর পূজা উৎসবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরকারের পক্ষ থেকে পূজায় আগত হিন্দু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এদিকে, এবারের পূজায় নিরাপত্তা দিতে সারাদেশে সজাগ দৃষ্টি রাখছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সারাদেশে মণ্ডপগুলোতে ৫ অক্টোবর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত আছেন। নারী স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশও উপস্থিত আছেন।
এ ছাড়া মণ্ডপ গুলোতে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর লাগানো হয়েছে। বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ আছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
পূজার দিনগুলোতে জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ‘পূজার সময় রাজধানীর কোথাও জলাবদ্ধতা হলেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম দ্রুত মাঠে নামবে।’
দেবী দুর্গাকে বলা হয় দুর্গতিনাশিনী। তিনি নবসৃষ্টির প্রতীক। ভক্তদের বিশ্বাস বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক জ্বালা যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন।
দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।