মিলেমিশে থাকার আশীর্বাদ কুমারী দেবীর
৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৪২
ঢাকা: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার মহাষ্টমী আজ। এ উপলক্ষে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন মণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয় কৃমারী পূজা। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সকাল থেকেই রামকৃষ্ণ মিশনে ভক্ত অনুসারীদের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পূজামণ্ডপ।
এবারের কুমারী পূজায় দেবীর আসনে বসেছেন শিক্ষক দম্পতির পাচঁ বছরের কন্যা প্রশংসা প্রিয়তা বন্দোপাধ্যায়। দেবী রূপে সাজিয়ে পূজার আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয় তাকে। এ সময় শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসার ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য ও উলুধ্বনি দিয়ে কুমারীকে ফুলের মালা পরানো হয়।
পূজা অর্চনা শেষে ভক্তকুলসহ সকলের জন্য আশীর্বাদ করেন কুমারী দেবী। আশীর্বাদে দেবী বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম আর বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, একইরক্ত একই প্রাণ। মিলে মিশে থাকবি তোরা এই আর্শিবাদ করি, সুখে শান্তিতে দেশটি তোদের এবার যাবে ভরি।’
স্বামী বিবেকানন্দ নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯০১ সালে কুমারী পূজার প্রচলন করেন। কুমারী পূজা বিশেষ ধরনের পূজা। এই পূজায় কুমারী মেয়েকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। দেবী দুর্গার আরেক নাম ‘কুমারী’। মূলত নারীকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়।
পূজা শেষে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সনাতন ধর্মে সর্বোচ্চ আসন দেওয়া হয় নারীকে। নারী রূপে মা’কে। দুর্গা পূজার মাধ্যমে আমরা জগতের মা’কে পূজো করি। জগৎ জননী মা দুর্গার মানবিক প্রতীক এবং প্রতিমা কুমারীর মধ্যে তার সর্বাধিক প্রকাশ বলে দুর্গা পূজার সময় কুমারী পূজা করি।
তিনি বলেন, ‘কুমারীকে পূজা করার জন্য কোনো জাতি ধর্ম-বর্ণ বিচার করা দরকার নেই। সব জাতির সব বর্ণের কুমারীকে পুজো করার বিধান আছে। তবে আমাদের শাস্ত্র অনুসারে ব্রাহ্মণ কন্যাকেই পুজো করা হয়ে থাকে।
এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। তবে শাস্ত্র অনুসারে ১ থেকে ৫ বছরের কন্যাকেই উপযুক্ত মনে করা হয়।
কুমারী প্রশংসা প্রিয়তার বাবা প্রিয় শংকর বন্দোপাধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে কুমারী পূজার জন্য বাছাই করা হয়েছে। এ জন্য আমার খুবই ভালো লাগছে।‘
তিনি বলেন, ‘আমার দুটি মেয়ে। দুটি মেয়েই কুমারী পূজার আসনে বসেছে। বড় মেয়ে প্রণিতা উষ্ণ বন্দোপাধ্যায় ২০১৫ সালে। আর এবার ছোট মেয়ে প্রশংসা প্রিয়তা বন্দোপাধ্যায় কুমারী পূজায় বসার সুযোগ পেয়েছে।’
প্রিয় শংকর বলেন, ‘সবাই আশীর্বাদ করবেন। আমার মেয়ে বড় হয়ে শক্তিরূপে সমাজ থেকে যেন অসুর দূর করতে পারেন। আর মাতৃরূপে আর্তমানবতার সেবা করতে পারে।’