ঢাকায় পানি সরবরাহ বাড়াতে ৭৩২ কোটি টাকা চায় ওয়াসা
৭ অক্টোবর ২০১৯ ১০:৪০
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় পানি সরবরাহ বাড়াবে ওয়াসা। এজন্য ‘জরুরী পানি সরবরাহ’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৭৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গত ১ অক্টোবর প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন (ঢাকা ওয়াসা) ঢাকা মহানগরবাসীদের নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। দ্য ইস্ট পাকিস্তান অর্ডিনেন্স, ১৯৬৩ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী বাণিজ্যিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নগরবাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াসার দায়িত্ব হচ্ছে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঢাকা শহরে মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করা। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা গড়ে ২ হাজার ৪০০ এমএলডি পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। এর ৮০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস হতে প্রায় ৮৫০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠস্থ উৎস হতে ৫টি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত ১ কোটি ৬০ লাখ নগরবাসীর পানির চাহিদা প্রায় ২ হাজার ৪০০ এমএলডি।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিবছর জনসংখ্যা গড়ে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেইসঙ্গে গভীর নলকূপের উৎপাদন গড়ে ৫ শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালে জনসংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা যায়। জনগণের জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটায় তাদের মাথাপিছু পরিমাণগত পানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে ঢাকা শহরের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসংখ্যাও বাড়ছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানির চাহিদা। এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে পানির চাহিদা বেড়ে ৩৫০০ এমএলডি হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকা ওয়াসার ভিশন হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সরবরাহ করা। সেজন্য সায়েদাবাদ ফেজ-৩, গন্ধর্বপুর ফেজ-১ পানি শোধনাগারগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে, যা ২০২৪ সাল নাগাদ চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এই প্রকল্পগুলো চালু না হওয়া পর্যন্ত নগরবাসীর পানির চাহিদা সহনীয় পর্যায়ে রাখাতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- থোক পরামর্শ সেবা, ৯৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন, ২৮৫টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, ৯৫টি গভীর নলকূপ রিহ্যাবিলিটেশন, ৫০টি আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট, ৫০টি রেইন ওয়াটার হারভোস্টিং, ১৯০টি স্কাডা সিস্টেম স্থাপন, ৩৮০টি পাম্প ডেলিভারি লাইন স্থাপন, ২৫০টি পাম্প ঘর নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ৯৫টি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন শিফটিং নির্মাণ, ১০০টি জেনারেটর শিফটিং, ২৫০টি অস্থায়ী টিনসেড নির্মাণ, ৭ কিলোমিটার পানি লাইন স্থাপন, ২০০টি পাম্প মটর সেট, ৯৫টি ক্লোরিনেশন সেট, ৩৮০টি ফ্লোমিটার, ৯ হাজার বৈদ্যুতিক ক্যাবল, ৩৫ কিলোমিটার কলাম পাইপ, ৭ কিলোমিটার পানির লাইন, ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার ডেলিভারি লাইন, ৪৮ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, ৯৫টি বিদ্যুৎ সংযোগ ফি দেওয়া।
পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম-প্রধান রেজাউল আযম ফারুকী উল্লেখ করেছেন, ঢাকা ওয়াসার আওতায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্মাণ চলমান রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে কি পরিমাণ পরিশোধিত পানি ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা যোগ হবে, কি পরিমাণ পানি কবে নাগাদ ঢাকা শহরে সরবরাহ করা সম্ভব হবে তা আলোচনা করতে হবে।
এছাড়া বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ৮৫০টি গভীর নলকূপ আছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৩৮০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ঢাকা ওয়াসার বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ৪৪৭ এমএলডি পানি সংযোজন করা হবে। এতে চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদিত হতে পারে। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৫০টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো কিভাবে ব্যবহৃত হবে তা আলোচনা হতে পারে।