রূপা হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:২৮
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্তবাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। আরেক আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
সোমবার সকালে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, হেলপার শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর। বাসের সুপারভাইজার সফর আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায়ের বিচারক ছোঁয়া পরিবহনের গাড়িটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার জন্য কালেক্টর টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে নিদের্শ প্রদান করেছেন।
রায় ঘোষণার পর রূপার বড়ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস আকবর খান, সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এম. এ করিম মিঞা এবং মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল এবং অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার নাছিম সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা এ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা আদালতের কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলেম। আমরা মনে করি এ রায়ের মধ্য দিয়ে আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলাটি প্রমান করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরেও এমন রায়ে আমরা বিস্মিত। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আদালত রায়ের এ দিন ঠিক করেন। এদিন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ১২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।
এর আগে ৩ জানুয়ারি মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মামলায় জব্দ তালিকা, সুরতহাল রিপোর্ট, চিকিৎসক, ৫ আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দী,২৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন আদালত।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপাকে ছোঁয়া পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
সারাবাংলা/টিএম