আবরার হত্যার বিচারসহ ৭ দফা দাবিতে ফের বুয়েটে বিক্ষোভ
৮ অক্টোবর ২০১৯ ১০:৫৯
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারের এই মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আবরার হত্যার বিচার করে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিতভাবে এ হত্যায় শনাক্ত হওয়া খুনীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। শেরে বাংলা হলের পেছন দিয়ে ঢুকে ডা. এম এ রশিদ হল পার হয়ে শেরে বাংলা হল প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি। এখন বুয়েট শহিদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন- আবরার হত্যা: শোকার্ত স্বজনরা, উত্তাল ক্যাম্পাস
এই শেরে বাংলা হলেরই আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন আবরার ফাহাদ। রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তাকে তার ১০১১ নম্বর রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ওই হলেরই ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার তথ্য জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারাই। পরে আর রুমে ফিরে আসেননি আবরার। সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে তার নিথর দেহ পাওয়া যায় হলের সিঁড়ির নিচে। তার পুরো শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। সহপাঠীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন আবরারকে।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, স্বীকার বুয়েট সভাপতির
আবরার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবারের বিক্ষোভ মিছিল থেকে খুনীদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে— ‘খুনীদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই’, ‘প্রশাসনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ভিসি তুই নিরব কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘আমার ভাইকে মারলি কেন? জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যা: বুয়েট ছাত্রলীগের সম্পাদকসহ ১৯ জনের নামে মামলা
বিক্ষোভকারীরা আবরারের খুনীদের বিচারসহ সাত ধফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো—
- খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
- ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা খুনীদের সকলের ছাত্রত্ব আজীবনের জন্য বাতিল নিশ্চিত করতে হবে;
- আবরার হত্যায় দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে;
- আবরার হত্যার ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একইসঙ্গে ডিএসডব্লিউ কেন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছেন, তাকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে সবার সামনে সে বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে;
- আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আহসানউল্লা হল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল আগামী ১১ নভেম্বরের বিকেল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে;
- রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ নভেম্বর বিকেল ৫ টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে;
- মামলা চলাকালীন সব খরচ ও আবরারের পরিবারের সব ধরনের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
শেরে বাংলা হল ও রশিদ হলসহ বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেখানে বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলামকে বিকেল ৫টার মধ্যে শহীদ মিনারে আসার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যার ঘটনায় সোমবার সারাদিনই বুয়েট ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের দুই অতিরিক্ত কমিশনার এলে তাদেরও শেরে বাংলা হল অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে আবরার হত্যার আলামত হিসেবে জব্দ সিসিটিভি ফুটেজের কপি শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর করে তবেই ছাড়া পান দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:ফুটেজ হস্তান্তর করে তবেই ‘ছাড়া পেলেন’ পুলিশ কর্মকর্তারা
আবরার বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের মুক্তিযোদ্ধা রোডে। বাবার নাম বরকত উল্লাহ।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।