আবরার হত্যার ঘটনা পুঁজি করে মাঠে নেমেছে ছাত্রশিবির
১০ অক্টোবর ২০১৯ ২০:১০
ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে ‘প্রতিবাদ কর্মসূচি’র নামে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। নিজেদের শক্তি জানান দিতে এরই মধ্যে রাজধানীর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। এসব মিছিল থেকে আবরার হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে শিবির।
অভিযোগ উঠেছে, আবরারকে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মারধর করা হয়। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাতভর নির্যাতনের একপর্যায়ে আবরার মারা যান। মূলত এই বিষয়টিকে ‘সহানূভূতি’ আদায়ের কৌশল শিবির মাঠে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
আরবারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া আবরার হত্যাকাণ্ডে সুষ্ঠু বিচার হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দল বুঝি না। কে ছাত্রলীগ, কে কোন দলের, বুঝি না। অপরাধী যারাই হোক, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
তবে আবরারের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই মাঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়ে চলেছে ছাত্রশিবির। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে তারা। জানা গেছে, এসব মিছিলে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ স্লোগান ব্যবহার করে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে চলেছে এই ছাত্র সংগঠনটি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়ে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা’ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আবরারের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ভাটারায় বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবির। প্রগতি সরণীতে সকাল ৮টায় এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। সকাল ৯টায় মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম সজিবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বসুন্ধরার সামনে থেকে শুরু হয়ে কুড়িল বিশ্ব রোড গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ মুরাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর সকালে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রশিবিরের সিলেট মহানগর শাখা। নগর শিবির সেক্রেটারি মামুন হোসাইনের পরিচালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি ফরিদ আহমদ বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগ যে নৃশংসভাবে সারারাত সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা কোনো সভ্য সমাজের মানুষের কাজ হতে পারে না, তা কোনো ছাত্রের কাজ হতে পারে না। ছাত্রলীগের এ বর্বরতা পশুত্বকেও হার মানিয়েছে।’
মহানগর সভাপতি ফরিদ আহমদ বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী লেখার কারণে আবরাকে শিবিরকর্মী বলতে যাচ্ছেন। তাহলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, শিবির মানেই আধিপত্যবাদবিরোধী, শিবির মানেই সম্রাজ্যবাদবিরোধী, শিবির মানেই স্বাধীনতার পক্ষে, শিবির মানে বাংলাদেশ।’
এ ছাড়া বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রশিবির। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে শিবির নেতারা ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে।
শিবির নেতারা বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগকে অপকর্মের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। ফলে খুন হামলা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদকসহ এমন কোনো জঘন্য কর্মকাণ্ড নেই, যা তারা করছে না। এমনকি গত ১০ বছরে এরা নিজেদের ১৭ নেতাকর্মীকে খুন করেছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসকে ভীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছে। কিন্তু সরকার কোনোটির বিচার তো করেইনি, উল্টো বিভিন্ন সময় খুনি-লম্পটদের পুরস্কৃত করেছে।
এদিকে, ছাত্রশিবিরের সহকারী প্রচার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘ছাত্রলীগ আজ দানবীয় রূপ ধারণ করেছে। ছাত্র সংগঠনের কোনো বৈশিষ্ট্য ছাত্রলীগের মধ্যে বিদ্যমান নেই। ছাত্রলীগ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতিচ্ছবি। সুতরাং শিক্ষার্থীদের জানমাল রক্ষা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
প্রসঙ্গত, রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে বাংলা হলে তার নিজ রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, আবরার ছাত্রশিবির করেন— এমন সন্দেহ হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একজন নেতাও জানিয়েছেন, আবরারকে ডেকে নেওয়ার পর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তার মোবাইল থেকে মেসেঞ্জার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করা হয়। পরে সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে হলের সিঁড়িতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে ব্যাপক মারধরের দাগ ছিল।
আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে মারধর করা হয়েছিল কি না— জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিবির সন্দেহে ডেকে আবরারকে প্রাথমিকভাবে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ওইটাই একমাত্র কারণ কি না, এই পর্যায়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এর বাইরে আরও কারণ থাকতে পারে। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’