ঢাকা: আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বাদ জুম’আ বায়তুল মোকররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম।
তিনি বলেন, ‘সরকারি দরেল লোক-জনের হাতে এ দেশের বহু মানুষ খুন হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে, গুম হয়েছে। কিন্তু আবরার হত্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। আবরার ছিল সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন নামাজি ছাত্র। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়নি। বরং এ দেশের পক্ষে কথা বলার কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।’
ফয়জুল করীম বলেন, ‘এ দেশের বিরুদ্ধে কিছু লেখেনি আবরার। সে মাটির পক্ষে কথা বলেছিল, এই দেশের জনগণের পক্ষে আবরার কথা বলেছিল। সুতরাং আবরারকে হত্যা করা হয়নি- গোটা বাংলাদেশকে হত্যা করা হয়েছে, আবরারকে হত্যা করা হয়নি- এ দেশের পতাকাকে হত্যা করা হয়েছে, আবরারকে হত্যা করা হয়নি- এ দেশের মাটিকে চিরতরের জন্য নিমেষ করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, আবরারকে দাফন করা হয়নি- এদেশের ভূ-খণ্ডকে দাফন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র চলছে ভূ-খণ্ড নিয়ে, আবরারকে নিয়ে নয়। কেন আবরারকে হত্যা করা হয়েছে? কারা হত্যা করেছে? সেই আসামি কেন এজাহারে নামভুক্ত হল না? সে আসামিকে কেন এতো পরে অ্যারেস্ট করা হলো? এতো ক্ষিপ্ত কেন আবরারের ওপর? এরা কারা? এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। আবরার হত্যার বিচার আমরা চাই।’
আমি শুধু শাসক নই, মা’ও— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে ফয়জুল করীম বলেন, ‘আপনি তো আবরারের মা, খুনিরও মা। আপনি কীভাবে বিচার করবেন? যেহেতু উভয়কুলের মা আপনি। যদি সত্যিকারে আপনি বিচার চান, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্টের বিচারকদের দিয়ে একটা স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করা হোক। সুরতহাল, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, সাক্ষী, আসামি সবই উপস্থিত। কাজেই এখানে বিচার কাজ লেন্দি হওয়ার কোনো কারণ আমরা দেখি না। যদি বিচারই চান, তাহলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করেন।’
তিনি বলেন, ‘এই বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন শুধু আবরারের জন্য নয়, লাখ লাখ ছাত্রের নিরাপত্তার জন্য, এদেশর মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য। যদি এই দেশের মানুষ বিচার না পায় তাহলে আপনি ছাত্রদের দাবায়ে রাখতে পারবেন না। এদেশের জনগণ এমন আন্দোলন শুরু করবে, এমন বন্যা সৃষ্টি হবে, এমন ঢেউ সৃষ্টি হবে, এমন টর্নেডো সৃষ্টি হবে, সেটাকে রোধ করার ক্ষমতা আপনার প্রশাসন রাখে না।’
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।
ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। কিন্তু ফেনী নদীর পানি দেওয়ার চুক্তি সই করে এসেছেন। তিস্তার পানি না পাওয়া পর্যন্ত ফেনী নদীর এক ফোটা পানি ভারতকে দেওয়া হবে না। এই গোলামী চুক্তি বাংলাদেশের মানুষ মানে না।’
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুড়ে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এসে শেষ হয়। মিছিলে ইসলামী আন্দোলনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক অংশ নেন।