আবরার হত্যা: তোহাকে সাক্ষী করার দাবি আইনজীবীর
১১ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:২১
ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায় গ্রেফতার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী অমিত সাহা ও হোসাইন মোহাম্মদ তোহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
রিমান্ড শুনানির সময় হোসাইন মোহাম্মদ তোহার পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আয়ুব হোসেন বলেন, ভিকটিম আর হোসাইন মোহাম্মদ তোহার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। কী ঘটেছে সেখানে সে দেখতে গিয়েছিলো। ভিডিও ফুটেছে তোহাকে কোথায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ কেন অভিযোগ করেনি। এ মামলার সাক্ষী হিসাবে তোহাকে নেওয়া যেতে পারে। রিমান্ড নেওয়া মানে টর্চার করা। প্রয়োজন হলে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দিতে পারেন। তাই রিমান্ড বাতিলের প্রার্থণা করছি। অপর আসামি আমিত সাহার পক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলো না।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। আসামিদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে মামলার বাদী এবং সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে বা যেকোনো ভাবে প্রভাবিত করে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। মামালটি প্রাথমিক তদন্তে আছে।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, শেরেবাংলা হলের ১০১১ ও ২০০৫ নং রুম দুটি ছিল টর্চার সেল। আসামিদের উপস্থিতিতে আবরারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। বুয়েট থেকে আবরার বিশ্বমানের ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু সম্ভাবনাময় একটা ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
এদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ৬ অক্টোবর রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে আবরারকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পরের দিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত হলের ২০১১ এবং ২০০৫ নম্বর কক্ষে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প এবং লাঠি-সোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করা হয়। এর ফলে ঘটনাস্থলে আবরারের মৃত্যু হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে সাক্ষ্য প্রমাণে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণে আসামিদের মামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ মামলায় গ্রেফতার আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে অমিত সাহা এবং তোহার নাম প্রকাশ করেছে। মামলার সুষ্টু তদন্তের স্বার্থে মুল রহস্য উদঘাটন, অন্যান্য সহযোগী আসামিদের গ্রেফতার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে রিমান্ড শুনানির আগে তোহাকে বিমর্ষ দেখা যাচ্ছিল। অস্থিরতা কাজ করছিল তার মধ্যে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক প্রশ্নে উত্তরে তোহা জানান, বাঁধা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। পলিটিক্যাল প্রটোকল ভাঙলে আমাদের উল্টো মারতো। এখানে আমি কিছু বলিনি। কে কে আবরারকে মেরেছে জানতে চাইলে তোহা বলেন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, ইফতি মোশাররফ সকাল ও অনিক সরকার আবরারকে মেরেছে।
এর আগে, আবরার হত্যার ঘটনায় ৭ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ৯ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ১০ অক্টোবর গাজীপুর থেকে হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন রাজধানীর শাহজাহানপুর কালিমন্দির থেকে আটক করা হয় মামলার আরেক আসামি অমিত সাহাকে।
এদিকে, শুক্রবার সকালেও আবরার হত্যা মামলার আরেক আসামি মাজেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৩ জন। আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।