Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুবাইয়ে ছাড়া পাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, ফেরত প্রক্রিয়ায় গলদ


১১ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৫৩

ঢাকা: শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ দুবাইয়ে ছাড়া পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গ্রেফতারের পর থেকেই আপাতত তাকে দুবাইয়ের ডেরা এলাকার একটি থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। সেখানেই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ। তবে তার নাম পাসপোর্টে আলী আকবর লেখা। আর আলী আকবরের নামে কোনো অভিযোগ নেই।

সে জন্য দুবাইয়ের পুলিশ তাকে ছেড়ে দেবে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই যে কোনো সময় জিসান পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পেতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুবাইয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি জানায়, জিসান গত ২ অক্টোবর সকাল ১০টায় জার্মানি থেকে দুবাইয়ে আসেন। ওইদিন দিনগত রাতে ডেরা দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় জিসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর থেকেই জিসানের প্রধান সহকারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টিএনটি নাদিম ও তার গাড়ির শোরুমের ম্যানেজার শাকিল দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন জিসানকে ছাড়াতে। এমনকি জিসানের ছোটভাই শামীমও মালয়েশিয়া থেকে পরদিন বিকেলে দুবাইয়ে পৌঁছান।

সূত্র জানায়, নাদিম, শামীম ও শাকিলের বুদ্ধিতে যেখানে যত টাকা লাগছে, সেই অনুযায়ী টাকা ঢালছে, লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। একাধিক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পারদর্শী একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য। ফলশ্রুতিতে জিসানকে ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

জিসানকে কারাগারে না রেখে তাকে থানায় রাখা হয়েছে কেন জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের নিয়ম দুবাইয়ের নিয়ম এক নয়। এখানে একজন আসামির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণিত না হয় ততদিন থানাতেই রাখা হয়। কেবলমাত্র অভিযোগ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে আসামিকে জেলে পাঠানো হয়। জিসানের বেলায়ও তাই হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্রটি জানায়, জিসানকে ‘জিসান’ নামে দুবাইয়ের পুলিশ চেনে না। ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টে যে নাম থাকবে সেই নাম ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না। জিসানের পাসপোর্টে আলী আকবর নাম আছে। তিনি ভারতের নাগরিক। ওই নামে ভারতের ইন্টারপোল কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি।

তাই দুবাইয়ের পুলিশ তার নামে কোনো অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশে জিসানের নামে একাধিক মামলা ও ইন্টারপোলের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও সেটি জিসান নামে রয়েছে।

সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের পুলিশ জিসানকে ফেরত আনার যে প্রক্রিয়ার কথা বলছে বলে জানতে পেরেছি, তাতে জিসানকে ফেরত আনা সম্ভব নয়। কারণ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। জিসানকে বাংলাদেশে আনতে হলে সবার আগে ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে আলী আকবরের নামে ৪২০ ও ৩৪ ধারায় মামলা দিয়ে ভারতীয় ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। এরপর প্রথমে তাকে ওই পরোয়ানায় ভারতে আনতে হবে এবং ভারত থেকে জিসানকে বাংলাদেশে আনতে হবে। এর বাইরে কোনোভাবেই জিসানকে সরাসরি দুবাই থেকে বাংলাদেশে আনা সম্ভব নয়।

পুলিশ গ্রেফতার করার পর থেকেই জিসানের গাড়ির শো রুমটি বন্ধ রয়েছে। তবে মস্কো নাইট ক্লাবটি এখনো চালু রয়েছে বলে জানায় দুবাইয়ের সূত্রটি।

সুত্র জানায়, সম্রাট যখন জিসানকে কয়েক মাস আগে থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয় ঠিক তখনই সম্রাটকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিসান। হত্যা পরিকল্পনায় খালেদও রাজি হন। হত্যা মিশন করার দায়িত্ব নেন টিএনটি নাদিম।

টিএনটি নাদিম ও সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনীর পরশুরামে একই এলাকায়।  দুবাইয়ের বুরুজ খলিফা টাওয়ারে বসেই জিসান ও নাদিম কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেন। চট্টগ্রামে বাড়ি বর্তমানে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বর্ডার দিয়ে একটি একে-২২ এনে দেন। এই অস্ত্রের জন্য ক্যাসিনো খালেদও টাকা বিনিয়োগ করেন। একই সময় আরেকটি ইতালিয়ান ওয়াল্টার পিপিকে ৭.৬৫ পিস্তলও নিয়ে আসা হয়। একে-২২ অস্ত্রটি ডিবি পুলিশের হাতে গত ২৬ জুলাই রাজধানীর খিলগাঁও সিপাহীবাগে ধরা পড়লেও ৭.৬৫ পিস্তলটি ধরা পড়েনি। এই অস্ত্রটি এখন মগবাজারের শোভনের কাছে রয়েছে। এই অস্ত্রের জন্য নাদিম ২০ রাউন্ড ‍গুলি শোভন ও সেন্টুর কাছে পাঠান বলে জানায় সূত্রটি।

ঢাকা মহানগর গোযেন্দা পুলিশের একটি সুত্র জানায়, ডিবি পুলিশ যখন একে-২২ সহ তিন সন্ত্রাসীকে (খান মো. ফয়সাল, জিয়াউল আবেদীন জুয়েল ও জাহেদ আল আবেদীন ওরফে রুবেল) গ্রেফতার করে তখন জিসানের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে কথা বলেন ডিবির কর্মকর্তারা। এরপরই মূলত ডিবি কর্মকর্তারা দুবাইয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে জিসানকে গ্রেফতার করতে আবেদন করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জিসানকে দুবাইয়ে গ্রেফতার করা হয়। এখন জিসানকে দেশে নিয়ে আসার বিষয়টি সরকারের কাজ বলে জানানো হয়।

সূত্র জানায়, জিসান দুবাই ও জার্মানিতে বসে বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশে এক সময় তার হয়ে টিএনটি নাদিম কাজ করতেন। এখন নাদিম জিসানের দুবাইয়ের ব্যবসা দেখাশোনা করলেও বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন তার হয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে শোভন, সেন্টু, রনি, রওনক, দিদার ও সজল অন্যতম। এদের মধ্যে রওনক, দিদার ও সজল জি কে শামীমের কাছ থেকে ভাগের টাকা তুলত এবং নাদিম ও জিসানের কাছে পাঠাতো। রওনক, দিদার ও সজল মাঝে মধ্যে দুবাইয়ে গিয়ে নাদিম ও জিসানের সঙ্গে বৈঠক করে আসেন।

দুবাইয়ের ওই সূত্রটি জানায়, কোনো কারণে জিসান বের হতে না পারলে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করবেন টিএনটি নাদিম। নাদিম জিসানের পরিবার ও ব্যবসা দেখার পাশাপাশি ঢাকাকেও নিয়ন্ত্রণ করবেন। এ জন্য বেশ কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। জিসানের নিজস্ব অ্যাপস ব্যবহার করে তারা যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ওই অ্যাপসে ঢাকার শোভন মূল ভূমিকা পালন করছেন। শোভন এখনো মগবাজার, টিএনটি কলোনি ও মালিবাগের বড় একটা অংশ থেকে প্রতিমাসে চাঁদাবাজি, ডিস লাইনের টাকার ভাগসহ বিভিন্ন টাকা তোলেন। টাকার একটা বড় অংশ প্রতিমাসে জিসান ও নাদিমকে পাঠান শোভন। কিছুদিন আগে শোভন বাড্ডায় সম্রাটের ছোটভাইকে মারার জন্যও লোক পাঠিয়েছিলেন। তবে সম্রাটের ভাই সেদিন সেখানে উপস্থিত না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। এজন্য মগবাজারের শোভনকে পুলিশ ধরতে পারলে আন্ডারওয়ার্ল্ড ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে। কারণ এ মুহূর্তে ঢাকায় শোভনই একমাত্র ভূমিকা পালন করছেন। একদিকে সম্রাট, খালেদ, শামীম অন্যদিকে জিসানের এই অবস্থা তাতে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের কেউ থাকবে না। ফলে হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির দুই ইন্সপেক্টরকে সরাসরি হত্যা করে আলোচনায় আসে জিসান। এর পরে দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থেকে ২০০৫ সালে জিসান ভারতে চলে যান। সেখানে ২০০৯ সালে কোলকাতা পুলিশের হাতে আটক হন। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কোলকাতায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকার চাঁদাবাজি। জিসান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যায় বছর দুয়েক আগে। আর এর পরে সেখান থেকেই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সেখান থেকে ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করে জার্মানিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পান বলেও জানা যায়। সেখান থেকেই মূলত ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে বেড়াতেন জিসান। মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও এলাকার আলোচিত সন্ত্রাসী জিসান বিরুদ্ধে ঢাকায় একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

ইন্টারপোল খালেদ টিএনটি নাদিম দুবাই বাংলাদেশ ভারত শীর্ষ সন্ত্রাসী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান সম্রাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর