Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্ণফুলী রক্ষায় স্থায়ী রূপরেখা তৈরির নিদের্শ ভূমিমন্ত্রীর


১২ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৩৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দখল ও দূষণ রোধ এবং কর্ণফুলী নদী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। একইসঙ্গে কর্ণফুলী রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও সক্রিয় হওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর অভয়মিত্র ঘাটে ‘কর্ণফুলী নদী দখল-দূষণমুক্তসহ অবিলম্বে ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘চ্যানেল আই চট্টগ্রাম অফিস’ এই আলোচনার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী জাবেদ বলেন, ‘অব্যাহত দখলের পর কর্ণফুলী নদী এখন যে অবস্থায় আছে, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এই নদীর আর কোনো ক্ষতি করার সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না। আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আরএসমূলে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদী উদ্ধারের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আইনের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, মাঝপথে হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমি চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে প্রত্যাশা করছি যে, এই নদীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা এগিয়ে আসবেন।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা অনেক কাজ করেন। কিন্তু আশা করব আরও সক্রিয় হবেন। আরও জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। মন্ত্রী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে আছি। আমি আজ মন্ত্রী আছি, কাল না-ও থাকতে পারি। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে, যেহেতু আমি চট্টগ্রামের সন্তান। কথা দিচ্ছি, সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী রূপরেখা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘দখল ও দূষণ রোধ করা এবং এই নদীর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আপনাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বন্দরের প্রাণ হচ্ছে কর্ণফুলী নদী। আপনি বন্দর ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসেন। একটা স্থায়ী রূপরেখা তৈরি করেন। আপনি আজ চেয়ারম্যান আছেন, কাল না-ও থাকতে পারেন। কিন্তু পরবর্তী চেয়ারম্যান এসে যাতে এই রূপরেখা অনুসরণ করতে পারেন। ড্রেজিংটা নিয়মিত করতে হবে, সেজন্য একটা রূপরেখা তৈরি করুন।’

কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট অংশে নতুন সেতু নির্মাণের দাবির বিষয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বর্তমানে কালুরঘাটে যে সেতুটা আছে, সেটা অনেক পুরানো। এখন যেহেতু ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন যাচ্ছে, আরেকটা সেতু অবশ্যই প্রয়োজন। বোয়ালখালীবাসীর দাবি আছে, সড়কসহ যেন সেতু হয়। সেটাও হতে পারে, কোনো সমস্যা দেখছি না। কিন্তু কথা একটাই, পিলারের কাছে যে পলি জমা হবে, সেগুলো নিয়মিত অপসারণ করে নেভিগেশন ঠিক রাখতে হবে।’

বন্দর চেয়ার‌ম্যানের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজ হোক, সমস্যা নেই। এখন তো অনেক ধরনের প্রযুক্তি এসে গেছে। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ব্রিজ হোক না কেন, নিচে যে পলি জমা হবে, সেটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। ছোট ছোট টেন্ডারের মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ করতে হবে। এখন মাটির চাহিদা আছে। বালির দাম সোনার চেয়েও বেশি।’

কর্ণফুলী নদীজুড়ে লাইটারেজ জাহাজ ছড়িয়ে থাকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সাগরে অনেক জায়গা। লাইটারেজ জাহাজগুলো নদীতে কেন পার্ক করে রাখা হবে। আগে দেখতাম শুধু খারাপ আবহাওয়া হলে লাইটারেজগুলো নদীতে এনে রাখা হত। এখন তো সারাবছর ফিরিঙ্গিবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত লাইটারেজ জাহাজ রাখা হচ্ছে। এতে তো বন্দরে বড় জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়। নেভিগেশনের সমস্যা হয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে এক নম্বর জেটি অর্থাৎ নিচের দিকে নাব্যতা অনেক বেড়েছে। এখন ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসছে। কিন্তু উপরের দিকে নাব্যতা কমেছে। আমরা নিয়মিত ড্রেজিং করছি বলেই নাব্যতা বেড়েছে। উপরের দিকে পারছি না, সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা। সেখানে নদীর তলদেশে মাটি নেই, সব আবর্জনা, পলিথিন। প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আমরাও একমত যে কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে, যত খরচই লাগুক। এ বিষয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করা যায়। এ কমিটিকে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে।’

জাহাজ চলাচলের সুবিধায় কর্ণফুলী নদীর বাঁকগুলো সোজা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী আঁকাবাকা। এটাকে স্ট্রেইট করতে না পারলে জাহাজ চলাচলে সমস্যা থেকে যাবে। আমরা স্টাডি করছি। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা যেটা হচ্ছে, অনেককিছুই ভাঙতে হবে। কারখানাগুলো কোথায় প্রতিস্থাপন করা হবে, তাদের যেন ক্ষতি না হয় সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। সীমানা নির্ধারণ করা, এটা আরেকটা প্রতিবন্ধকতা।’

চলতি বছরে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর হাইকোর্টে রিট ও ১২টি মামলার কারণে কর্ণফুলী নদী দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া থেমে আছে বলে জানান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন।

চ্যানেল আই চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া, পরিবেশ গবেষক ইদ্রিস আলী, ব্যবসায়ী নেতা এস এম আবু তৈয়ব ও এম এ সালাম, স্থপতি আশিক ইমরান, সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রহুল আমিন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।

কর্ণফুলী ভূমিমন্ত্রী রক্ষা রূপরেখা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর