ক্লিন ইমেজের দক্ষ নেতৃত্ব খুঁজছে আওয়ামী লীগ
১২ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৩৩
ঢাকা: ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে এ বছরের অক্টোবরেই কমিটির মেয়াদ তিনবছর পূর্ণ হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দীর্ঘ সময় দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন না হওয়া এবং নেতাকর্মীরা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পাশাপাশি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ক্লিন ইমেজের দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ নতুন নেতৃত্ব খোঁজা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এক যুগেরও বেশি সময় পর শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন সুরাইয়া আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী। এছাড়া ২ নভেম্বর কৃষক লীগের, ৯ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের, ১৬ নভেম্বর শ্রমিক লীগের এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর বাইরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ অক্টোবর।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে এবার হার্ডলাইনে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে কাউকে বসানো হবে না। এছাড়া নিজের মতো করেই তিনি সাজাতে চান মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ফলে ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িয়ে যারা বিতর্কিত হয়েছেন, তাদের কেউই ঠাঁই পাচ্ছেন না যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগে। এমনকি ঠাঁই পাচ্ছেন না অনুপ্রবেশকারীরাও।
সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিই স্থান পাবেন। সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। কোনো বিতর্কিত, দুর্নীতিতে জড়িত ও চাঁদাবাজদের স্থান দেওয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের ভাবমূর্তি একেবারে ধূলোয় মিশে গেছে। এদিকে সম্প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পরপরই ছাত্রলীগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু দুর্নীতিবাজ এর সুযোগ নিয়েছে। যাদের মধ্যে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশও জড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্নীতি আওয়ামী লীগকে যেমন বিব্রত করছে, তেমনি সরকারের উন্নয়ন অর্জনকেও ম্লান করছে। সেজন্য এবারের যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে, এর ব্যাপকতা থাকবে দীর্ঘমেয়াদী।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতির সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের কাজ শুরু করেছি। এবারের জাতীয় সম্মেলনে দলে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা স্থান হবে। কোনো ষড়যন্ত্রকারী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও বিতর্কিতদের স্থান এবার দলে হবে না।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু আবর্জনাযুক্ত নেতাকর্মী দলে ঢুকে পড়েছেন। চলমান অভিযান এসব আবর্জনা পরিষ্কারের। এবার দলে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া কেউ পদ পাবে না। অনেকেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে পারেন। কিন্তু পদ-পদবী পাবেন সঠিক নেতাকর্মীরা। তাই সবাইকে সতর্ক থেকে সম্মেলনগুলো সফল করতে হবে।