নয়াদিল্লির কাছে সমুদ্রের ৫০ বর্গ কিমির সার্বভৌমত্ব চায় ঢাকা
১৩ অক্টোবর ২০১৯ ১০:৫১
ঢাকা: ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধসংক্রান্ত হেগের স্থায়ী আদালতে (পারমান্যান্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন বা পিসিএ) বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বঙ্গোপসাগরের ৫০ বর্গ কিলোমিটারের একটি গ্রে এরিয়া উল্লেখ করা হয়। নয়াদিল্লির কাছে এই গ্রে এরিয়ার পূর্ণ সার্বভৌমত্ব চেয়েছে ঢাকা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ অক্টোবর ভারতের হায়দ্রবাদ হাউজে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে গ্রে এরিয়ার সার্বভৌমত্ব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। এর আগে ২০১১ সালে গ্রে এরিয়াসহ সমুদ্রের মহীসোপান সংক্রান্ত বিষয়ে জাতিসংঘের সমুদ্রসীমাবিষয়ক কার্যালয়ে (ওশেনস অ্যান্ড ল্য অব দ্য সি, ইউনাইটেড নেশনস) ভারতের বিপক্ষে আপত্তি দাখিল করেছে বাংলাদেশ।
ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ঢাকা-নয়াদিল্লি আন্তরিক পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সমুদ্রের গ্রে এরিয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা আছে। তবে এই সমস্যাটি দুই দেশ আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলতে ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের প্রস্তাবে আমরা সম্মত হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গ্রে এরিয়া সমস্যাটি খুব বেশিকিছু না। ওই এরিয়ার ওপরের অংশের মালিকানা ভারতের আর নিচের অংশের বাংলাদেশের। কিন্তু আমরা উভয় অংশের পূর্ণ অধিকার চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করেন। ঢাকা সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সমুদ্রসীমা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে থাকা আপত্তি আমরা নিজেরাই আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলতে চাই। এই বিষয়ে দুদেশই একমত প্রকাশ করেছি।’
ঢাকা-নয়াদিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ২০১১ সালে গ্রে এরিয়াসহ সমুদ্রের মহীসোপান সংক্রান্ত বিষয়ে জাতিসংঘের সমুদ্রসীমাবিষয়ক কার্যালয়ে ভারতের বিপক্ষে আপত্তি দাখিল করেছে বাংলাদেশ। নয়াদিল্লি এখন চাচ্ছে যে দুদেশ নিজেরাই আলাপ করে সেই আপত্তি মিটিয়ে ফেলবে। এই জন্য জাতিসংঘ থেকে সেই আপত্তি প্রত্যাহার করে নিতে নয়াদিল্লি ঢাকাকে প্রস্তাব দিয়েছে। ঢাকাও এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে জাতিসংঘ থেকে আপত্তি প্রত্যাহারের আগে ঢাকা চায় যে গ্রে এরিয়া সংক্রান্ত সার্বভৌমত্ব আগে নিশ্চিত করুক নয়াদিল্লি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও জানাচ্ছে, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত চলমান আপত্তি দুদেশ নিজেরাই মিটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে এই সমস্যার সমাধান খুব সহসা হবে না। কেননা এতে দুদেশের স্বার্থই জড়িত।
ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ২০১২ সালে জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন ল্য অব সি বা ইটলস) এক রায়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধসংক্রান্ত হেগের স্থায়ী আদালতে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্রগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সবধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ৫০ বর্গ কিলোমিটারের একটি গ্রে এরিয়া নিয়ে আর্ন্তজাতিক আদালত নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আদালত রায়ে বলেছেন যে, এই বিষয়টি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নেবে।
আর্ন্তজাতিক আদালত সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা ঠিক করায় এই গ্রে এরিয়ার সৃষ্টি হয়। আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমানার ৫০ বর্গ কিমি এরিয়া ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে বা ওভার ল্যাপিং হয়েছে। গ্রে এলাকার সমুদ্রের তলদেশের সম্পদের একক মালিকানা বাংলাদেশের। আর সমুদ্রের উপরিভাগের সম্পদের মালিকানা উভয় দেশের।