সাড়ে ৪ বছরে অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ, ব্যয় বাড়ছে দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে
১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:১৯
ঢাকা: ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও গত সাড়ে চার বছরে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৩৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতিও মাত্র ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ। এর মধ্যেই ২৩৫ কোটি টাকা খরচ বাড়িয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনী পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সংশোধনীতে ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির খরচ দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র’ প্রকল্পটি প্রথমবারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির আগামী সভায় উপস্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় নির্বাচিত জেলাগুলোর জনগোষ্ঠীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে এবং স্বল্প মেয়াদি কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের জীবন, সম্পদ, আশ্রয়স্থল, গবাদিপশু ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। তাই উপকূলীয় জনগণের সুরক্ষার প্রয়োজন। এ জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৯টি জেলায় ৫৫৬টি নতুন বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং ৪৫০টি বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্র মেরামতের জন্য ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পে অন্তভুক্ত ভৌত কাজের প্যাকেজ অনেক বড় এবং তা মূল্যায়নসহ অন্যান্য কাজ অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক সময় সাপেক্ষ হওয়ায় নির্মাণ কাজের অগ্রগতির বিলম্ব, উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন— আগাম বৃষ্টিপাত ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থান প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় মালামাল পরিবহন কষ্টসাধ্য। প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজে সাইক্লোন শেল্টারের ক্রয় প্রস্তাব চলতি বছরের ২৭ মার্চ ক্যাবিনেট কমিটি অন গর্ভারমেন্ট পার্সেসে উত্থাপন করা হলে প্রতিটি শেল্টারের প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় হালনাগাদ রেট শিডিউলের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিপিপি সংশোধন করে সিসিজিপিতে উত্থাপনের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ও প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এলজিইডির রেট শিডিউল পরিবর্তন, বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য ও বিভিন্ন অংশের ব্যয় সমন্বয় করে মোট ৩ হাজার ১৮৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একই বাস্তবায়ন মেয়াদে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটির ওপর চলতি বছরের ১১ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৫৫৬টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ৪৫০টি বিদ্যমান সাইক্লোন শেল্টারের উন্নয়ন, ৫৫০ কিলোমিটার সাইক্লোন শেল্টার সংযোগকারী সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ এবং স্লোপ প্রটেকশন দেওয়া।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে হালনাগাদ রেট শিডিউল সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়, ডিপিপি প্রণয়নের সময় রেট শিডিউল অনুযায়ী সাইক্লোন শেল্টারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। বর্তমানে ২০১৮ সালের রেট শিডিউলের জন্য সাইক্লোন শেল্টারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে শেল্টারের মূল ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন ও কিছু উপকরণ সংযোজিত হওয়ায় প্রতিটি শেল্টারের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের তারতম্যের কারণেও প্রকল্পের ব্যায় বাড়ছে।
সাইক্লোন শেল্টারের মেরামত ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে বিদ্যমান ৪৫০টি সাইক্লোন শেল্টারের মেরামত ও পুনর্বাসন ব্যয় কমানো হয়েছে। সোসাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যয় কমেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সোসাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট খাতে কম অর্থ প্রকল্পের পূর্তকাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ডিজাইন ও সুপারভিশন, মনিটরিং ও ইভাল্যুয়েশন পরামর্শক অংশ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ওয়ার্কশপ, প্রকিউরমেন্ট প্যানেলের মতো অংশগুলোতে প্রকল্পের ব্যয় কমানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের আরও অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতের ব্যয় সমন্বয়, সিসিজিপি’র সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, উপকূলীয় ৯টি জেলার ৭৪টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন, সম্পদ, আশ্রয়স্থল, গবাদিপশু ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষায় প্রকল্পটি ইতিবাচক অবদান রাখবে। তাই মূল প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
যেসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র
বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, বানারিপাড়া, সদর, গৌরনদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা; ভোলা জেলার সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা ও তজুমুদ্দিন উপজেলা; পটুয়াখালী জেলার বাউফল, দশমিনা, দুমকী, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, সদর ও রাঙ্গাবালী উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া, ইন্দুরকানি, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর, নেছারাবাদ ও সদর উপজেলা।
চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, বাশঁখালী, বেয়ালখালী, চন্দনাইশ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, কর্ণফুলী, লোহাগড়া, মিরসরাই, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, সন্দীপ, সাতকানিয়া ও সীতাকুন্ড উপজেলা; কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া, সদর, কতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা; ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁঞা, সদর, ফুলগাজী, পরশুরাম ও সোনাগাজী উপজেলা; লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর, সদর, রামগঞ্জ, রামগতি ও রায়পুর উপজেলা এবং নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া, কবিরহাট, সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি ও সুবর্ণচর উপজেলা।