Sunday 08 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শতবর্ষী গাছটির স্নিগ্ধ ছায়ায় বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটি দিন


১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:১৫ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:৫১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঠাকুরগাঁও: প্রায় আড়াইশ বছর বয়সী বিশাল আকৃতির গাছটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটি সবুজ পাহাড়। সবাইকে ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। প্রথম দেখায় গাছটিকে বট, অশ্বথ বা অন্য কোনো গাছ মনে হলেও বাস্তবে সেটা একটি বিশাল আমগাছ। সূর্যপুরী জাতের এই আমগাছটি দেখতে পাওয়া যায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা হরিণমারী নয়াবাড়ি গ্রামে।

বিস্ময়কর এই আমগাছটি দেখতে পর্যটক আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অনেকে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দেন গাছটির স্নিগ্ধ ছায়ায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ডালপালার নিচে সারাটা দিন কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ফিরে আসেন শহরে। সন্ধ্যার পর সেখানে নেমে আসে নিঃসীম নিরাবতা। রাত্রির অন্ধকার নেমে আসার পর শেয়ালের হাঁক-ডাক আর সীমান্ত রক্ষীদের ছাড়া আর কারও দেখা মেলে না।

বিজ্ঞাপন

জেলা শহর থেকে গাছটির দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় গন্তব্যস্থলে। দেড় বিঘা জমিজুড়ে গাছটির শাখা প্রশাখা বিস্তৃত রয়েছে। ৮০ ফুটেরও বেশি উঁচু এই গাছটির কাণ্ডের বেড় ৩০ ফুট। এর অসংখ্য ডালের মধ্যে ১৯টি বড় বড় ডাল নুইয়ে পড়ে মাটির সঙ্গে লেগে আছে। বয়স যাই হোক, ফল দেয় প্রতিবছর। গাছটির আম খেতেও সুস্বাদ। উপজেলা প্রশাসন দর্শনাথীদের জন্য সেখানে একটি বিশ্রামাগার ও শৌচাগার তৈরি করেছে। রাখা হয়েছে পানি ও জলের সুব্যবস্থাও। গাছটি উত্তরে বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি। নিকটে ছোট্ট বাজার। সেখানে গড়ে উঠেছে দোকান-পাট ও চা বিস্কুটের দোকান। পাশে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক।

প্রাচীন এই আমগাছ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে নাগর নদী। নদীর ওপারে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলাম থানা শহর। নদীর দুই তীরে দিগন্ত জুড়ে দুদেশের চা বাগান। সেগুলোকে কেন্দ্র করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সড়কের জাউনিয়া এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি চা কারখানা।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁও। রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল জেলাটি। শস্য ভাণ্ডার আর তরু শ্রেণির সবুজ পরিবেষ্টন এই জনপদে ছড়িয়ে রেখেছে স্নিগ্ধতার আবহ। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জনপদটিতে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার বহু মূল্যবান সম্পদ। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিম সভ্যতার অসংখ্য প্রাচীন নির্দশনে পরিপূর্ণ ঠাকুরগাঁও জেলা। প্রাচীন এই জনপদের প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে একটি প্রকাণ্ড আমগাছটি।

কিভাবে যাবেন: রেল ও সড়ক পথে যাওয়া যায় ঠাকুরগাঁয়। সবগুলো উপজেলা, ইউনিয়ন ও  গ্রাম পর্যায়ে রয়েছে পাকা রাস্তা। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত আকাশ পথে ঠাকুরগাঁও গিয়ে বিকেলে ফিরে যাওয়া যায়।

থাকা ও খাবার ব্যবস্থা: জেলা শহরে আধুনিক মানের থাকা ও খাবার সুব্যবস্থা রয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলায় রেষ্ট হাউস ও উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় সীমিত আকারে সরকারি বিশ্রামাগার রয়েছে। তবে খাবার ব্যবস্থা সব এলাকাতেই আছে।

তথ্য ও চিকিৎসা: প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ই-মেইল ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা ও জেলা সদরে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

আরও যা দেখতে পাবেন ঠাকুরগাঁওয়ে: ইতিহাসের পরিক্রমায় কালের আর্বতে হারিয়ে যাওয়া পুরাকীর্তির অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। সময় পেলে ঘুরে দেখতে পারেন- রাজা টংকনাথের বাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ি, জগদল জমিদার বাড়ি, জামালপুর জমিদার মসজিদ, শালবাড়ি মসজিদ, সনগাঁও শাহী মসজিদ, ফতেপুর মসজিদ, মেদিনী সাগর মসজিদ, গেদুড়া মসজিদ, গোরক্ষনাথ মন্দির, হরিণ মারী শিব মন্দির, রামরাই দিঘি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিজড়িত খুনিয়া দিঘি, গড় ভবানীপুর, কোরম খানের গড়, পরিত্যক্ত বিমান বন্দর ও চিনিকল অন্যতম। এছাড়াও দেখতে পাবেন হরিপুরের সিংহাড়ী গ্রামে বিলুপ্ত প্রজাতীর মদন টাক পাখির কলোনী। এ এলাকার গৌরবগাঁথা ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পুরাকীর্তির স্মৃতিচিহ্ন, অপরুপ প্রকৃতি ও সরলমনা মানুষের সৌগত পরশ যে কোনো অভ্যাগতের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করবে।

আম গাছ শতবর্ষী সূর্সপুরী