খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আশঙ্কাজনক অবনতি: রিজভী
১৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:০৫
ঢাকা: খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনিত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (১৩ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় ৬১৩ দিন যাবত বন্দি করে রেখেছেন তাকে। কারাগারে নেওয়ার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ দেশনেত্রী এখন হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন না, কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না, নিজে হাতে খেতে পারেন না, মাথার চুলও বাঁধতে পারেন না। তার পোশাকও আরেকজনকে পরিয়ে দিতে হয়। হাত-পা শক্ত হয়ে গেছে। হাত-পায়ের আঙ্গুল ফুলে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘এ অবস্থায় পিজি হাসপাতালের আট বাই দশ ফুটের ছোট্ট কক্ষে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। পঁচাত্তর বছর বয়সী নেত্রীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বারবার ইনসুলিন পরিবর্তন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পরও সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়ায় শরীরের ওজন অনেকখানি কমছে।‘
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্ত্বেও উন্নতমানের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। তার জরুরিভাবে উন্নত চিকিৎসা দরকার।’
ব্যথার কারণে রাত্রে খালেদা জিয়ার ঘুম হচ্ছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যের আরও গুরুতর অবনতি ঘটছে। ঘাড়-মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। কয়েকবছর আগে অপারেশন করা চোখ এবং হাঁটুর ব্যথা ক্রমশ বাড়ার কারণে অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ‘গণতন্ত্রের মা’।’
দেশবাসী খালেদা জিয়ার পরিণতি নিয়ে অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার অমানবিক এবং বেআইনি কাজে এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা বেগম খালেদা জিয়ার বিপজ্জনক অসুস্থতাও ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারের অমানবিক ও অসুস্থ আচরণ প্রমাণ করে দেশনেত্রীর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছেন তারা।’
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন ‘কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানি থেকে মেধাবী তরুণ আবরার ফাহাদকে হত্যা ও বেগম জিয়ার বন্দিত্ব একই সুতায় গাঁথা। বেগম জিয়ার সুচিকৎসা হচ্ছে না। দেশনেত্রীর জামিনে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। বিএসএমএমইউর পরিচালককে দিয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে বলানো হচ্ছে -‘খালেদা জিয়া ভালো আছেন, তার অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি।’
‘কতটা অমানবিক হলে এতো বড় মনগড়া কথা তারা বলতে পারেন। জরুরিভিত্তিতে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। অন্যথায় যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমরা আজই দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘গতকাল চিকিৎসা শেষে ঢাকা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নামার সাথে সাথেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে (বীরবিক্রম) গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ গ্রেফতার সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানুষের চোখকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপকৌশল মাত্র।’
রিজভী বলেন, ‘সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী হিসেবে তিনি পানির ন্যায্য হিস্যা ও দেশের স্বার্থের পক্ষে একজন নির্ভিক ভাষ্যকার। পানি চুক্তির চক্রান্তের নানাদিক তুলে ধরতে পারতেন সাবেক এই মন্ত্রী। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার বিরুদ্ধে সোচ্চার মেজর হাফিজের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার জন্যই এ গ্রেফতার।’
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ মেজর হাফিজ নিস্তার পেলেন না। কীর্তিমান দেশপ্রেমিক এ মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করে সরকার তার প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছে। তার গ্রেফতার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আমরা এই মুহূর্তে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’