কর্মবিরতি ডাকলেও অহরহ মিলছে উবার
১৪ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৫৬
ঢাকা: রোববার (১৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা উবার না চালানোর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তেমন কার্যকর দেখা যায়নি। সোমবার ভোর থেকে উবারের অসংখ্য গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। আর ডাকলেও সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া মিলছে। চালকদের কর্মবিরতির খবরে জনপ্রিয় অ্যাপসটির পক্ষ থেকে উল্টো অফার ছেড়ে দেওয়ায় বহু চালক আবার গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন বলে দাবি করেন কর্মবিরতি ডাকা চালক সংগঠনের নেতারা।
বলা হচ্ছে, মূলত যে দুই সংগঠনের ডাকে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছিল তার চেয়ে বেশি চালক সড়কে সক্রিয় থাকায় সংকটে পড়েনি উবার।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে উবারের এক গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মিরপুর থেকে ট্রিপ নিয়ে এসেছেন। চালক আব্দুস সোবহান সারাবাংলা’কে জানান, তাদের দাবিগুলো ঠিক আছে। তবে রাজধানীতে দাবিগুলো নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তাদের সংখ্যা কোনোভাবেই ৩শ’র বেশি নয়। আর সাত হাজারের বেশি উবার কার প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা জুড়ে চলছে। ফলে দু’একশো গাড়ি না চললেও তাতে কোনো অসুবিধা হয় না। আর উবার শুধু চালক চালান তা নয়। বহু মালিকের একাধিক গাড়ি উবারে চলছে। মালিকরা বন্ধ না করলে উবার বন্ধ হবে না।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একজন উবার চালক বলেন, আসলে চালানোর গাড়ি বেশি আর যারা বন্ধ রেখেছেন সেই সংখ্যা নগণ্য।
মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টা উবার বন্ধ রাখবেন চালকরা
রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ২৪ ঘণ্টার জন্য এই সার্ভিসে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল চালকদের দুটি সংগঠন।
গত ৪ অক্টোবর প্রথম ঘোষণা দেয় রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস এসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন। পরে (১৩ অক্টোবর) একই ঘোষণা দেয় রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার ইউনিয়ন নামে আরেকটি সংগঠন। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, রোববার (১৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাজধানীতে উবারের কোনো গাড়ি চলবে না।
রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, তাদের কর্মবিরতি সত্বেও ঢাকায় উবার গাড়ি চলছে এটা সত্য। অনেক চালক এখনো তাদের সংগঠনের এই বার্তা পাননি। আর কর্মবিরতি দেখে চালকদের লোভে ফেলেছে উবার এমনটা দাবি করেন তিনি। ‘আজকের দিনে উবারে পাঁচটি রাইড শেষ করলেই ১শ টাকা বোনাস দিচ্ছে’ এমনটা দাবি করেন তিনি। তবে উবারের অন্তত ১০ জন চালকের সঙ্গে কথা বলে এমন অফারের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উবার চালক সংগঠনের দাবি, গত পাঁচ মাস ধরে তারা উবার থেকে আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কমিশন নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে গাড়ির চাহিদা বেড়ে গেলে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে উবার। উবারের সাম্প্রতিক এসব আচরণে চালকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিআরটিএ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাপস হিসেবে উবার নিবন্ধন নিলেও এখনো বিআরটিএর নিয়ম-নীতির মধ্যে আসেনি। উবারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখন বিআরটিএ’র হাতে নেই। এমনকি অভিযোগ এলে সেটি অ্যাপে খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছেও হস্তান্তর করেনি উবার।
এদিকে, আন্দোলনকারী উবারের চালকেরা আট দফা দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবি, ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রা শুরু করা থেকে শেষ পর্যন্ত মিনিট ও কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া দেওয়া এবং কমিশন ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা। এছাড়া চাহিদা বেশি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে উবারের সেই কৌশলেরও বিরোধী আন্দোলনকারী চালকরা।
২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট কারে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে দ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় উবার। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘স্যাম’ (শেয়ার আ মোটরসাইকেল) যাত্রা শুরু করলে তা বন্ধ করে দিয়েছিল বিআরটিএ। এরপর কার্যক্রম শিথিল করে নেয় বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান স্যাম। উবারের যাত্রা শুরুর পর আরও অনেক কোম্পানি নামে। এখন ঢাকায় উবার, পাঠাও, সহজ, ও ভাইসহ কয়েকটি কোম্পানি রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই সেবার আওতায় প্রাইভেট কার ছাড়াও রয়েছে মোটরসাইকেল ও সিএনজি।