যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
১৪ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৫৯
ঢাকা: একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক পাচঁ আসামিকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ১৪ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
পাচঁ আসামি হলেন- রফিকুল, রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব নাথ। আর বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান রুবেল। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোরের কেশবপুর থানার মহাদেবপুরে গ্রামের আব্দুস সামাদের ঘরে অস্ত্রসহ একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে এবং সামাদকে ঘর থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে সামাদের বাবা মো. নজর আলী শেখ মমিনপুর রেজিস্ট্রার বেসরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় সামাদের উভয় পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর কাটা, রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সামাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে খুলনার ২৫০ বেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় তার মৃত্যু হয়।
সামাদের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি তার বাবা বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় হত্যা মামলায় দায়ের করে। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ১২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে থেকে আলতাফ ও রফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তারা ৯ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে যান। এছাড়াও পরবর্তীতে আসামি রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান।
এদিকে মামলাটির ওপর যশোরের দ্রুত বিচার ট্রাইব্রুনালে বিচার শুরু হলেও পরবর্তীতে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট অভিযুক্ত ১১ আসামি যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় প্রত্যেক আসামিকে ১০ বছরের সাজা ও জরিমানা দেওয়া হয়।
পরে ওই একই বছর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল আবেদন করে আসামি রফিকুল, রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব। আপিল শুনানিকালে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট থেকে জালিয়াতি করে জামিন নেয়। জামিনের নথিতে তারা ৯ মাসের জেলের থাকার তথ্য ৯ বছর দেখিয়ে জামিন পান। পরে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আসামিদের জামিন স্থগিত করে আসামিদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিলের আদেশের পর আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। এরপর দীর্ঘ ২ বছর ৫ মাস কারাভোগের পর আসামিরা পুনরায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় এবং চলতি বছরের ১৫ মে জামিন পেয়ে তারা কারামুক্তি পান। তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ফের আপিল দায়ের করে। যার ধারাবাহিকতায় মামলাটি সোমবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগের শুনানি শেষে ওই পাঁচ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।