Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ ঘণ্টায় চসিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ৬৯ অভিযোগ


১৪ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৩৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাত্র চার ঘণ্টার গণশুনানিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ৬৯ অভিযোগ পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সামনেই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চট্টগ্রাম এই শুনানির আয়োজন করে। শুনানি উপলক্ষে অভিযোগ জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার টানানো হয়েছিল। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই শুনানি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুনানিতে নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ করেন সালামত মিয়া নামে ওই ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। কাউন্সিলর মানিকের বিরুদ্ধে মসজিদের জায়গায় জোরপূর্বক দোকান নির্মাণ করে ভাড়া বাবদ ৭০ লাখ টাকা আদায় এবং এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়ে দৈনিক ১০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া সালামত আরও অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মানিক রেলওয়ের পাহাড়ি জমি দখল করেছেন আর উন্নয়নকাজের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

শুনানিতে উপস্থিত কাউন্সিলর মানিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও দুদক কমিশনার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অনিয়ম-দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ এসেছে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। চসিকের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী শামসুল হুদা ছিদ্দিকী অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ট্রলি সংষ্কার দেখিয়ে মেসার্স মাসুম এন্টারপ্রাইজের নামে ভূয়া বিল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সুদীপ বসাক।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাগরিকায় একটি নতুন ও একটি পুরোনো অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট আছে। পুরোনো প্ল্যান্টটিতে ৬৩ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী আছে। এরপরও সুদীপ বসাক ১২৯ জন লোক নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই তার আত্মীয়–স্বজন। এছাড়া সাগরিকায় করপোরেশনের পাথর ডিপোতে পাথর গ্রহণ ও বিতরণ হিসাবে গরমিল দেখিয়ে সুদীপ বসাক ২ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করে লিখিত অভিযোগও জমা পড়ে সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। এতে বলা হয়, ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার দুটি ওয়ে ব্রিজ (গাড়িসহ মালামাল মাপক যন্ত্র) স্থাপন ও সরবরাহের কাজ দিয়েছেন সুদীপ তার এক চাচাতো ভাইকে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সুদীপ বসাককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার তিন সহকর্মী।

তবে শুনানিতে উপস্থিত সুদীপ বসাক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে দুদক কমিশনার করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের বিরুদ্ধেও ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। এর মধ্যে আছে, করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকীর জাল সনদের মাধ্যমে এক শ্রমিককে পরিদর্শক করেছেন। এছাড়া টাকা না দিলে ময়লা না সরানোর অভিযোগ।

প্লট বরাদ্দের নামে চসিকের বিরুদ্ধে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ আনেন এক ভুক্তভোগী। আবদুল মতিন নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেকসিটি প্রকল্পে প্লট দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন করপোরেশনের সার্কেল–৫ এর রাজস্ব কর্মকর্তা জানে আলম। প্লটের জন্য দেওয়া টাকার বিপরীতে তাকে কিছু কাগজপত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে যাচাই–বাছাই করে দেখা যায় এসব কাগজপত্র জাল। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও তা দেননি ওই কর্মকর্তা।

এসময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানে আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে বলে জানানো হয়। দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম দুই মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

গৃহকরের টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে চসিকের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় জহির আহমদ নামে এক ব্যক্তির পাঁচ তলা ভবনের গৃহকর নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের ২৭ মে নোটিশ দেওয়া হলে ২৮ জুন করপোরেশনের কর আদায়কারীকে সব টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে রশিদ দেওয়া হয় ৫৫ হাজার টাকার। বাকি টাকার কোনো হিসাব তাকে দেওয়া হচ্ছে না।

শুনানিতে চসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অপরাধ দুর্নীতি নাসির

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর