চট্টগ্রামের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ১০০ কোটি, মেয়াদ একবছর
১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:০৭
ঢাকা: নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে বিদ্যমান সড়ক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য একের পর এক সড়ক সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দু’টি আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। তবে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে শুরু করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও গত আড়াই বছরে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতিই মাত্র ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ করার জন্য আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের খরচও ১০০ কোটি টাকা বেশি দেখিয়ে সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
আড়াই বছরে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন)’ শীর্ষক প্রকল্পটির অগ্রগতির হার এত কম ও সংশোধনীতে বাড়তি ব্যয়ের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের রেট শিডিউল ধরে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরে ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের খরচ বেড়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ওই দুই সড়কের সংস্কারের প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৩৬ কোটি টাকা। এখন ১০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ সংশোধনীতে এক বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিকে, গত জুন মাস পর্যন্ত দুই বছর তিন মাসে প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২২০ টাকা, অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও আর্থিক অগ্রগতিই বাকি অর্ধেক।
প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জোন অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খান এ মো. কামরুল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি যখন তৈরি হয়, তখন ২০১৫ সালের রেট শিডিউল ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরে ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া নতুন নতুন কার্যক্রম যুক্ত করাও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ।
এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, কোথাও কোথাও কাজের পরিমাণ কমলেও ব্যয় বেড়েছে। এক্ষেত্রে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের দেওয়া ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে কারণেও খরচ বাড়তে পারে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের আওতায় সারাদেশে ২০৯টি আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ২৪৬ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে ১১টি আঞ্চলিক মহাসড়ক, যার মোট দৈর্ঘ্য ৪৫৭ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। সড়কগুলোর বর্তমান অবস্থা ও ট্রাফিক ভলিউম প্রকল্পে সওজ চট্টগ্রাম জোনের আওতায় দুইটি আঞ্চলিক মহাসড়কের মোট ৪৮ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করতে ওই প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। বর্তমানে প্রকল্পের কিছু নতুন অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিছু অংশের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তাতে করে প্রকল্পের খরচ ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পটি এ বছরের ডিসেম্বরের বদলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব রেখে পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধনী পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৫৮ দশমিক ৯৯ হেক্টর ক্ষতিপূরণসহ ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক বাধেঁ মাটির কাজ; ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ; সড়কের বিভিন্ন অংশে ৭ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করা, ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করা, ২৪ দশমিক ৩৯৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা ও ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক মজবুত করা; ৩৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার সার্ফেসিং; এক দশমিক ৬৫ কিলোমিটার বিদ্যমান পেভমেন্ট নির্মাণ এবং ৩ হাজার ৮০০ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিং করা হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে— সড়ক বাঁধে মাটির কাজের পরিমাণ ২ দশমিক ২৫ লাখ ঘনমিটার বেড়ে যাওয়ায় ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা, নতুন পেভমেন্ট নির্মাণের পরিমাণ ৪ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার বেড়ে যাওয়ায় ২৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করতে সড়কের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যমান ১ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট উচুঁ করতে অতিরিক্ত ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫০ কিলোমিটার বেড়ে যাওয়ায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা; আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণের পরিমাণ ৩৮ মিটার বেড়ে যাওয়ায় ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা; নতুন আইটেম হিসেবে ২২ হাজার ৮৪০ বর্গমিটার কংক্রিট স্লোপ প্রোটেকশনের জন্য ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ৭২০ মিটার আরসিসি টো-ওয়ালের জন্য ৩ কোটি ৬০ হাজার টাকা; নতুন আইটেম হিসেবে ৬০০ মিটার আরসিসি ক্রস ড্রেন নির্মাণের জন্য ৪১ কোটি টাকা এবং ৩০০ মিটার ব্রিক ম্যাশনারি ইউ ড্রেন নির্মাণের জন্য ১ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হিসাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনটি বাজার এলাকা বাইপাসের জন্য ২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ও আটটি স্থানে বাঁক সরলীকরণের জন্য ২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ প্রয়োজন। প্রকল্প প্রণয়ণের সময় ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য তৈরি মূল প্রকল্পে প্রস্তাব না করে সংশোধিত প্রকল্পে বাজার এলাকায় বাইপাস ও বাঁকসরলীকরণের প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্টাডিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
প্রতীকী ছবি