Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তবুও ‘বক্ষে ধরিব জড়ায়ে’


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:০০

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘ওর একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেকোনো মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমার জীবনেও অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল তখনতো ও আমাকে ছেড়ে যায়নি, তাহলে আমি কেন ওর এই বিপদের সময়ে ওকে ছেড়ে চলে যাব’ – পাশে বসা স্ত্রীর হাত ধরে কথাগুলো বলে চলেন স্বামী।

স্ত্রীকে দেখিয়ে বলেন, ‘ও যদি আমাকে ছেড়ে না যায় তাহলে আমি কোনোদিন এই হাত ছাড়ব না, ওকে নিয়েই সংসার করব’ বলে স্ত্রীর হাতদুটো আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন তিনি।

ধর্ষণের শিকার স্ত্রীর হাত দুটো জড়িয়ে ধরে, নিজের দুই হাত দিয়ে স্ত্রীর দুই হাত ধরে, পাশে বসিয়ে এ কথা গুলো বলেন ২০ বছরের ঐ তরুণ।

গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে মেয়েটিকে রিলিজ করা হয়। পরে শনির  আখড়ায় অবস্থিত এক বাড়িতে বসে কথা হয় নির্যাতিত মেয়ে, তার স্বামী, শাশুড়ি, মেয়েটির বাড়িওয়ালাসহ সবার সঙ্গে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত গত ৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভাড়া বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় ১৮ বছরের এই তরুণী।

ধর্ষণের শিকার মেয়ে ও তার স্বামী জানায়, দুই বছর আগে তারা ভালবেসে বিয়ে করে। কিন্তু পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়াতে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাসা ভাড়া নেয়, কাজ নেয় একটি এমব্রয়ডারি কারখানায়। এর কয়েকমাস পর তারা রামপুরায় চলে আসে, এরপর গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতার গাউছিয়া এলাকায় দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নেন। ছেলেটি একটি টেক্সটাইল মিলে আর মেয়েটি একটি বোতল কারখানায় কাজ করতো। কিন্তু ঘটনার দিন তার শরীর খারাপ থাকায় কারখানায় যায়নি সে। পরে কাজ শেষে রাত আটটার দিকে তার স্বামী এসে মেয়েটিকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়, মেয়েটির হাত-পা-মুখ ছিল বাঁধা।

বিজ্ঞাপন

ধীরে ধীরে মেয়েটি বলে, আমি শক্ত আছি, কারণ, এই ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না, এটা আমার জীবনের একটা দূর্ঘটনা। কিন্তু খুব করে চাই, অপরাধীরা যেন শাস্তি পায়, তাদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়। এরা যদি কোনোভাবে পার পেয়ে যায় তাহলে আমার মতো অনেক মেয়ে এ নির্যাতনের স্বীকার হবে।

আমার সঙ্গে যা হয়েছে তার চেয়েও কঠিন শাস্তি যেন ওরা পায়- এটাই সবার কাছে আমার আবেদন।

কান্না চেপে মেয়েটি বলে চলে, ওরা যখন আমাকে নির্যাতন করছিল, তখন ওদের পায়ে পর্যন্ত আমি ধরেছি। বলেছি, আমাকে ছেড়ে দেন, মাফ করে দেন, কিন্তু ওরা থামেনি, তাই আমিও ওদের মাফ করছি না।

মেয়েটি বলে চলে, আমার বাবা মারা যাবার পর মা আবার বিয়ে করেছে। এ ঘটনার পর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে ফোনে, সে বলেছে, আমি যেন তার সংসারে ফেরত না যাই, সে আমাকে নেবে না, আমাকে নিলে তার স্বামীর বাড়িতে থাকা হবে না। নীরবে চোখ থেকে পানি পরতে থাকে তার। এক নাগাড়ে বলে চলে, ভাই-বোন কেউ আমার খোঁজ নেয়নি।

ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বলে, সন্ধ্যার দিকে তাদের ভাড়া বাড়িতে ঢুকে চার যুবক তাকে ধর্ষণ করে। পরে জ্ঞান ফিরলে সে দেখতে পায় ঘরে অনেক মানুষ। সেদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে নিয়ে আসা হয়।

চার যুবকের মধ্যে একজনের নাম মোক্তার বলে মেয়েটি জানায়। বাকিদের সে দেখলে শনাক্ত করতে পারবে বলেও জানায় সে।

এদিকে, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই মোক্তার নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। মোক্তার আরও দুই যুবক তাহের এবং খোকনের নামও জানিয়েছে জবানবন্দিতে।

বিজ্ঞাপন

চলে আসার সময়ে মেয়েটি বলে, দুজনের আয়ে সংসারটা খুব ভালো চলছিল, কোনো অভাব অনটন ছিল না, আনন্দে ছিলাম। ধীরে ধীরে সংসারের সবকিছু কিনছিলাম, একটু একটু করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। আমাদের সুখের কোনো কমতি ছিল না- আমার সেই সংসারে এখন ঝড় উঠেছে।

কিন্তু আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। আসামীরা যেন সবাই বিচারের আওতায় আসে এই কেবল প্রার্থণা আমার।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর