মাত্র ২ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রফতানির সঙ্গে যুক্ত
১৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:০১
ঢাকা: মাত্র ২ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার পণ্য বিদেশে রফতানি হয়। পণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে সেভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ঋণ প্রাপ্তি, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতায় অবিবাহিত নারীরা এখনও উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে পারছেন না। দেশের ৮৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই বিবাহিত, তাদের ৬৫ শতাংশেরই আবার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে নারী উদ্যোক্তা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন। এসএমইএ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কে এম হাবিব উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ৭ বিভাগের ৪৫ জেলার ১৫১০ জন নারী উদ্যোক্তার ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার বয়স ৩১ থেকে ৫০ বছর। তরুণ নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ (২১ থেকে ৩০ বছর)। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। আর দেশের ৮৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বিবাহিত। মাত্র ২ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা অবিবাহিত। বাকিদের বিচ্ছেদ হয়েছে কিংবা বিধবা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৭৭ শতাংশ নারী এখন আর পরিবার থেকে কোনো বাধা পায় না। ৭ শতাংশ নারী এখনও পরিবার থেকে বাধা পায়। ৫ শতাংশ নারী পরিবার থেকে কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, তাদের স্বামী তাদের ব্যবসা পছন্দ করেন সা। ৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা হতে শ্বশুরবাড়ি থেকেও বাধা পান।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স পেতে কোন বিড়ম্বনায় পড়েননি। ৭ শতাংশ নারীকে ট্রেড লাইসেন্স পেতে বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। ৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন ট্রেড লাইসেন্স পেতে লম্বা সময় লাগে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালে গ্রাজ্যুয়েট পর্যায়ে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালে ৪২ শতাংশ নারীকে পারিবারিকভাবে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করা হতো। ২০১৭ সালে তা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ নারীকে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে এটি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী কর দিতেন। যা ২০১৭ সালে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতেন যা ২০১৭ সালে বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামাজিকভাবে পিছিয়ে যাওয়া নারীরা ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে শিল্পায়ন ও ব্যবসায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেছেন।
বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়ম নীতিতে শিথিলতা আনতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেওয়া দরকার। কীভাবে ব্যবসা করতে হয় সে বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। কম্পিউটার ও কার্যকর বিজনেস ইংলিশ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে।
এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘যারা উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পেরেছে তাদের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু যারা আসতে পারেনি, তাদের ডাটা এখানে নেই। নারী উদ্যোক্তাদের উপর আরও গবেষণা হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল চালিকাশক্তি। রফতানি প্রবৃদ্ধি, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি দারিদ্র্যবিমোচন সার্বিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের গবেষণালব্ধ ফলাফল নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে কার্যকরনীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারক গবেষক উন্নয়ন কর্মী ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এর থেকে উপকৃত হবেন।’
তিনি বলেন, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়ন আমাদের সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এটা বাস্তবায়নে আমরা শিল্পখাতে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। আমাদের সরকারের শিল্প ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব নীতির ফলে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে। মোট জাতীয় উৎপাদনের শিল্প খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা এসএমই খাতের আওতাভুক্ত। খাতটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সৃষ্টি হচ্ছে এসএমই খাত থেকে। এসএমই খাত মোট অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য চাহিদার শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে। সরকার খাতটির উন্নয়নে সর্বাত্মক কাজ করে চলেছে।