ওমর ফারুকের একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে যুবলীগ
১৯ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৪৯
ঢাকা: ২০০৯ সালে যুবলীগের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এর পর ২০১২ সালের সম্মেলনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। মূলত এর পর থেকেই শুরু ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্ষমতার আধিপত্য। ক্ষমতার দাপটে তার ইশারায় যেমন যুবলীগের প্রতিটি কমিটি হতো, তেমনি তার ইশারাতেই ভাঙতো কমিটি। দলে নেতাকর্মীরা পদও পেত তার কথায় আবার পদ হারাতোও তার কথায়।সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কথার গুরুত্ব ছিল না তার কাছে। তিনি সব সিদ্ধান্ত একাই নিতেন— এমন অভিযোগ যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীর।’
জানা যায়, ২০১২ সালে ষষ্ঠ কংগ্রেসে ওমর ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর পদ ভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৬০-৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে অনেকে পদ-পদবি পেয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো বিক্রি হয়েছে অর্ধকোটি টাকা করে। যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে দিয়ে এসব টাকা সংগ্রহ করা হতো বলে জানা গেছে। অভিযানের মুখে সেই আনিসের এখন হদিস মিলছে না। যারা টাকার বিনিময়ে পদ নিয়েছেন পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রমাণ পায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ক্যাসিনো কাণ্ডের পর যুবলীগের চেয়ারম্যানের কোনো দলীয় তৎপরতা নেই। অথচ আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস। এই উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমন্ডিতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেলেও যুবলীগ চেয়ারম্যানের দেখা মিলছে না। সংগঠনের শেষ দুটি প্রেসিডিয়াম সভাতেও আসেননি তিনি।
সূত্রমতে, রোববার গণভবনে যাচ্ছেন যুবলীগের সধারণ সম্পাদক হারনুর রশিদের নেতৃত্ব সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এতে যাচ্ছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত তাকে যদি কংগ্রেস অনুষ্ঠানে না রাখা হয় তাহলে কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন কে? রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে মিলতে পারে সেই প্রশ্নের উত্তরও।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণভবনে যুবলীগের এই মিটিং ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কাকে ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। এটা পার্টি অফিসে ডাকা হলে আমি বলতে পারতাম। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যুবলীগকে গণভবনে ডেকেছেন। সেখান থেকে যাদের বলা হয়েছে, তারাই মিটিংয়ে যাবেন।’
অন্যদিকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বরটি বন্ধ ছিল। অনেকবার কল করে চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেহেতু অনেকদিন নিষ্ক্রিয় তাহলে মনে হয় তিনি গণভবনে যাবেন না। এর বেশি কিছু আমি আর বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু বলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান কোথায় আছেন, আমরা কেউই জানি না। এখন তিনি কী কারণে দলের হাইকমান্ডের বৈঠকে আসছেন না এটি আমি বলতে পারব না।’
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায়। অথচ এই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলে অনুপ্রবেশকারী, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, দলে পদ বিক্রি, ক্যাসিনোসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরা লিপ্ত হওয়ায় ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমালোচনার জন্ম দিয়ে বিপাকে ফেলাচ্ছে সরকারকে। এসব বন্ধ করার জন্য দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুদ্ধি অভিযান চলছে।
কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির ঘটনায় সরকার এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। তারপরই শুরু হয় দলীয় পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগসহ অন্য সংগঠনের যারাই এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। আওয়ামী লীগসহ স্বীকৃত সহযোগী অঙ্গ সংগঠনকে নভেম্বর এর আগে সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। নির্দেশের পর প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনের বোর্ড সভায় সম্মেলনের তারিখ প্রকাশ করা হয়।
এরই মধ্যে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া কৃষক লীগের ২ নভেম্বর, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৯ নভেম্বর, শ্রমিক লীগের ১৬ নভেম্বর ও যুবলীগের সম্মেলন ২৩ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ অক্টোবর। এ ছাড়াও আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।