খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা
২০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩৭
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের এই টিমের নেতৃত্ব দেবেন গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান উদ্যোক্তা ড. কামাল হোসেন।
রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আ স ম আবদুর রব এ তথ্য জানান।
আ স আবদুর রব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেদিন অনুমতি দেবে, সেদিনই আমরা দেখা করতে যাব।’
অসুস্থ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও আগামী এক সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আরও দুইটি কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— আগামী ২২ অক্টোবর বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণ শোক সমাবেশ এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে দেশ-বিদেশে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। ম্যানুয়াল এবং অনলাইনের মাধ্যমে এই স্বাক্ষর অভিযান চলবে। পরে রক্তের অক্ষরে সেই স্বাক্ষর সমাবেশে উপস্থাপন করা হবে।
আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘দেশের মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে এই সরকার। আমরা সেই জিনিসটা সমাবেশের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আপনাদের বলে দিতে চাই, সেটি হলো— তারা যে অপরারেশন করছে জুয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সেটা লোক দেখানো। তারা চুনোপুটি ধরছে, ওয়ার্ড কমিশনার ধরছে। রাঘব-বোয়াল কোথায়?’
রাঘব-বোয়ালের নাম প্রকাশ করা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, রাঘব-বোয়ালদের নাম প্রকাশ করুন। সম্রাট বলেছে- আমি একা কেন, আরগুলো কোথায়? আমি ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলছি, আপনাদের কারও জীবনে নিরাপত্তা নেই, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই। সবাইকে মারছে ওরা। আপনারা কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে আপনাদেরকে মারছে। সুতরাং এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’
২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে, কী করবেন?— এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আজকে যদি সব বলে ফেলি। পরবর্তী সময় কী বলব? অনুমতি এখন পর্যন্ত দেয় নাই। আমাদের নাগরিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার না দিলে যা করার তাই করব।’
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, প্রেসিডিয়াম সদস্য তানিয়া রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সাল, জাহেদ উর রহমান, মমিনুল ইসলাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। নির্বাচনে অভানীয় বিপর্যয়ের পর জোটের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি আবরার হত্যাকাণ্ড এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল- ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
তবে তাদের দেখা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকারের ওপর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর যে চিঠি তারা দিয়েছেন সেটির প্রেক্ষিতে দেখা করার অনুমতি পেলেই ড. কামাল হোসেন দেখতে যেতে পারবেন খালেদা জিয়াকে।