উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান বাধা কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি
২০ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৫৬
ঢাকা: অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশে দক্ষ জনবলের ঘাটতিই প্রধান অন্তরায়। আর তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। দক্ষতা বিকাশে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া উচিত।
‘দক্ষতা বিকাশের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় বক্তারা এসব মতামত তুলে ধরেছেন। রোববার (২০ অক্টোবর) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) সোনারগাঁও হোটেলে এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এনএসডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) মো. ফারুক হোসেন।
সূচনা বক্তব্যে মো. ফারুক হোসেন বলেন, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দেওয়া জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণগুলিতে কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দক্ষতা বিকাশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৯ এর আওতাধীন এনএসডিএ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে উপযুক্তভাবে বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য জাতীয় দক্ষতার একটি অ্যাকশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে চলেছে বলেও জানান তিনি।
ফারুক বলেন, কর্তৃপক্ষ সরকারি, বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য সংস্থাগুলির দক্ষতা কর্মসূচির সমন্বয়ে শুরু করেছে। অভিনব সময়োপযোগী পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে এবং পাঠ্যক্রম চালু, ইনস্টিটিউটের মানদণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং দেশের সকল শ্রমজীবী মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে দক্ষতা বিকাশের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় এবং একটি গোলটেবিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দক্ষতা বিশেষজ্ঞরা অ্যাকশন প্ল্যানের কাঠামো এবং এর ফরমেটগুলির বিষয়ে নানা সুপারিশ করেন। এছাড়া সর্টিফিকেশন, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এবং ইন্ডাস্ট্রি এনগেজমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় জানানো হয়, অধিকতর উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে রূপান্তরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং ভিশন ২০২১ এর অধীনে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ভিশন ২০৪১ এর অধীনে একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে ২০৩০ এরমধ্যে।
এর জন্য সরকার দক্ষতা বিকাশের আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এনএসডিএর প্রাতিষ্ঠানিক এবং পরিচালনামূলক দিকগুলির জন্য একটি মৌলিক কাঠামোসহ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়ন করে ২০১৮ সালে এনএসডিএ গঠন করেছে।
এনএসডিএ বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থার রূপান্তর ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে সম্পাদনের জন্য কাজ করছে বলে এনএসডিএ প্রধান ফারুক হোসেন উল্লেখ করেন।
কর্মশালায় বিভিন্নক্ষেত্রে দক্ষতা বিশেষজ্ঞর পাশাপাশি উচ্চ সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সুপারিশ করেন।
প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন যুবক চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। তাদের বেশিরভাগ বেকার থাকেন বা উপযুক্ত দক্ষতার অভাবে দেশে-বিদেশে স্বল্প আয়ের চাকরিতে নিযুক্ত হন। কারণ তারা চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। ২০২০ সালের মধ্যে দেশীয় দক্ষ শ্রম চাহিদা ৭২.৪১ মিলিয়ন হবে। এর মধ্যে কৃষিতে ২.৯ মিলিয়ন, নির্মাণ খাতে ৪.৪২ মিলিয়ন এবং তৈরি পোশাক খাতে ৫.৯৮ মিলিয়ন শ্রম চাহিদা থাকবে। পোশাক খাতের পর কৃষি-খাতে দক্ষতার ঘাটতি সবচেয়ে বেশি বলে আলোচনায় তথ্য ওঠে আসে।