বাবা-মেয়েকে গলাকেটে হত্যা: দায় স্বীকার করে দুজনের জবানবন্দি
২০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার নিমতলা মোড়ে স্বামী ও মেয়েকে গলাকেটে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার নারী। একইসঙ্গে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তার প্রেমিকও।
রোববার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে দুজন জবানবন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী।
এর আগে শনিবার সকালে সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা মোড়ে জনৈক শাহআলমের ভবনে যায় পুলিশ। সেখানে নিচতলার বাসায় দুজনের রক্তাক্ত মরদেহ পায় পুলিশ। মৃত দুজন হলেন- মো. আবু তাহের (৩৫) ও তার সাড়ে তিনবছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা নুর। তাদের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বসুরহাট উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে।
তাদের হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা বেগম (৩০) ও তার প্রেমিক মাইন উদ্দিন (৪৫)। শনিবার দুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ হাছিনাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গিয়েছিল। একইদিন গভীর রাতে নোয়াখালী সদর থেকে আটক করা হয় মাইন উদ্দিনকে।
এ ঘটনায় মৃত আবু তাহেরের বড় ভাই নুর আলম বাদী হয়ে হাছিনার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে হাছিনা ও মাইন উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, এক বছর ধরে তারা পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। আবু তাহেরের সঙ্গে হাছিনার দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রায়ই ঝগড়া হত। হাছিনা বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। শনিবার সকালে কাজে যাবার জন্য সে মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর গেলে আবু তাহের গিয়ে মেয়েকে নিতে বাধা দেন। তখন হাছিনা আবার মেয়েকে নিয়ে বাসার দিকে ফিরে যান। আবু তাহের সেখানে একটি নলকূপ থেকে পানি নিয়ে মুখ ধুতে থাকেন।’
ওসি বলেন, ‘হাছিনা মেয়েকে নিয়ে বাসায় গিয়ে তাকে খাটে শুইয়ে রেখে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন মাইন উদ্দিন ওই বাসায় ঢোকেন। দুজনে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মুহূর্তে মেয়ে সেটা দেখে কান্নাকাটি করতে থাকে এবং বাবাকে জানিয়ে দেবে বলে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাইন উদ্দিন ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরে এবং হাছিনা ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে তাহের বাসায় ঢোকামাত্র তাকে ঝাপটে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ এবং পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে হত্যা করে মাইন উদ্দিন ও হাছিনা। পরে হাছিনা মাইন উদ্দিন মেয়েকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে।’
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে জবানবন্দিতেও দুজন অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি সুকান্ত।
আবু তাহেরের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বসুরহাট উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে। তাহের ও হাছিনা দুজনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। তাহেরের আগের স্ত্রী মারা গেছেন। আর হাছিনার সাথে তার আগের স্বামীর ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে আবু তাহেরের সাথে বিয়ে হয়।
মাইনউদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। তার স্ত্রী বাড়িতে থাকেন। নগরীর নিমতলা মোড়ে বুচুইক্যা কলোনিতে শাহ আলম ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষকে বোর্ড দিয়ে দু’ভাগ করে একদিকে আবু তাহেরের পরিবার, আরেকদিকে মাইন উদ্দিন থাকেন।
মাইনুদ্দীন এসএপিএল কনটেইনার ডিপোতে শ্রমিকদের মাঝি (শ্রমিক সরবরাহকারী) হিসেবে কাজ করেন। আর তাহের ওই কনটেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন।