বিচার এড়াতে ইয়াবা ব্যবসায়ীর অভিনব কৌশল!
২১ অক্টোবর ২০১৯ ২১:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি মামলায় বিচার এড়ানোর জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বনের তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর ওই ব্যক্তি নিজের নাম-পরিচয়, ঠিকানা বদলে ফেলেন। এ কারণে একেক মামলায় তার একেক পরিচয় ও ঠিকানা থাকে। তদন্তে গিয়ে পুলিশকে সঠিক নাম-ঠিকানা খুঁজে পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচার এড়াতে সক্ষম হন এই ইয়াবা পাচারকারী।
মঞ্জুর আলম নামে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এসব তথ্য পেয়েছেন।
সন্তোষ জানান, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানার আমবাগান এলাকা থেকে ফারুক নামে একজনকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশ আন্তর্জাতিক একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ফারুকের যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচারের তথ্য পায়। এর মধ্যে মামলাটির তদন্তভার আসে পিবিআইয়ের কাছে। পিবিআই যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচারে যুক্ত জালাল নামে কুরিয়ার সার্ভিসের এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করে।
সন্তোষ আরও জানান, গ্রেফতার ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, গ্রেফতারের সময় জব্দ ১০০ পিস ইয়াবা তিনি মঞ্জুর আলম নামে একজনের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। এরপর সেগুলো তৈরি পোশাকের ভেতরে করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে হাসিব ও নাজমুল নামে দুজন ইয়াবা গ্রহণ করেন। ওই মামলায় গত ১৮ আগস্ট অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, যাতে ফারুক ও জালালের সঙ্গে মঞ্জুর আলমকেও আসামি করা হয়। একইসঙ্গে নাজমুল ও হাসিবের বিষয়ে তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবার জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ওই অভিযোগপত্রে মঞ্জুর আলম কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার গোদারবিল এলাকার আমির হোসেন ও আজম বাহারের ছেলে বলে উল্লেখ করে পিবিআই।
সূত্রমতে, গত ২৪ অগাস্ট রাতে নগরীর ষোলশহর এলাকা থেকে ৩০২ পিস ইয়াবাসহ মঞ্জুর আলম ও আব্দুল মতিন নামে দুজনকে গ্রেফতার করে খুলশী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে মঞ্জুর তার বাবার নাম নজির আহমেদ ওরফে কালা মিয়া এবং মার নাম আয়েশা খাতুন উল্লেখ করা হয়। আর ঠিকানা উল্লেখ করা হয় নগরীর ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়ায়। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-১৯৯১২২১৯০৬৩০০০২২৬।
পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঞ্জুর আলম গ্রেফতার হয়েছে খুলশী থানার মামলায়। ওই মামলায় জামিনে এসে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচারের মামলায় আদালতে জামিনের আবেদন করে। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর আদেশের কপি তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে পিবিআইতে আসে। তখন দুটি মামলার নথি পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পাই, ব্যক্তি একই হলেও মা-বাবার নাম-ঠিকানা ভিন্ন। পরে কারাগারে গিয়েও আমরা সেটা নিশ্চিত হই।’
মঞ্জুর আলমের আসল নাম-ঠিকানা পেতে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান পিবিআই’র এই কর্মকর্তা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে, বাবা-মায়ের নাম গোপন করে মঞ্জুর পুলিশের সঙ্গেই জালিয়াতি করে আসছে। ডবলমুরিং থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায়ও সে আসামি বলে আমরা জানতে পেরেছি। অথচ পুলিশ জানে না এই মঞ্জুর আলমই সেই ব্যক্তি। আমরা তার সঠিক পরিচয় ও ঠিকানা উদঘাটন করতে পারলে সে আর পুলিশের সঙ্গে জালিয়াতি করতে পারবে না।’