প্রধানমন্ত্রী দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থাশীল: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
২১ অক্টোবর ২০১৯ ২২:২৯
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থাশীল। তিনি নিজেও অনেকবার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এছাড়াও দেশের সব উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যখাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। আমরা শিশুমৃত্যুর হার কমিয়েছি, মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি, আমাদের গড় আয়ু এখন প্রায় ৭৩ বছর। সবমিলিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যখাত আশেপাশের বিভিন্ন দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে।’
বাংলাদেশের চক্ষু চিকিৎসার মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য বড় বড় সাফল্যের পাশাপাশি চক্ষু চিকিৎসা খাতেও বাংলাদেশ এখন বহুগুণ এগিয়ে গেছে। চক্ষু চিকিৎসা সেবাকে দেশের সর্বোত্র পৌঁছে দিতে এ পর্যন্ত ৫০টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি ১২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪০ জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমন্বিত চক্ষু চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আরও ১৫০টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্রমান্বয়ে দেশের সকল উপজেলায় এই কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হবে।’
চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে ১৫ শ ডাক্তারকে প্রমোশন দিয়েছি এবং আগামী অল্পদিনের মধ্যেই আরও ১৫ শ ডাক্তারকে প্রমোশন দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে আমাদের টিম কাজ করছে। আমরা চাই আপনারা প্রমোশন পান, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পান, এটা সরকার দিচ্ছে এবং আগামীতে আরও দেওয়া হবে। তবে আপনাদের কাছে আমাদের দাবি হলো, আপনারা মানুষকে ভালো সেবা দিন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে মানুষকে চিকিৎসা দিন। প্রধানমন্ত্রীও আপনাদের থেকে এটা আশা করেন।’
ডেঙ্গুর প্রকোপের সময়ে চিকিৎসকদের ঈদের সময়েও সেবা দিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈদে চিকিৎসকদের ছুটি থাকে না। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ফেলে রেখে তারা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এছাড়া কিছুদিন আগে ডেঙ্গু প্রকোপে চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে যত রোগী এসেছে, কাউকেই ফেরত দেওয়া হয়নি, সবাইকে চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসকদের এই অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, ও এসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদসহ অনেকে।
আলোচনা সভায় বক্তারা জনগণের মধ্যে চক্ষুরোগ বিষয়ক অন্ধত্ব নিবারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চক্ষু রোগ ও অন্ধত্বের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচির জন্য তহবিল সংকুলান ও বৃদ্ধির জন্য অবহিতকরণীয় বিষয়ে তথ্যাদি তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সারা বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ অন্ধ, ২১ কোটি ৭০ লাগ মানুষ মধ্যম ও অতিমাত্রার ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন (দূরের জিনিস কম দেখা), ১০০ কোটি মানুষ কাছের স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন এবং ৮৯ শতাংশ মানুষ মধ্যম এবং স্বল্প আয়ের দেশে বসবাস করছে। বাংলাদেশে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অন্ধ, যার প্রায় ৮০ শতাংশ (৬ লাখ ৫০ হাজার) ছানিজনিত কারণে অন্ধত্বের স্বীকার হচ্ছে এবং প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া দেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অন্ধ যার প্রায় ১২ হাজারই ছানিজনিত কারণ। সময়মত ছানি অপারেশন করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।