৭ বছরেও শেষ হয়নি চার মেরিন একাডেমি, ব্যয় বেড়েছে ৮১ কোটি টাকা
২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৩৪
ঢাকা: নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না ৪টি মেরিন একাডেমি স্থাপন প্রকল্প। ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পটি কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ করা যাচ্ছে না। গত জুন মাসে মেয়াদ শেষে প্রকল্পটির অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৬.৩৮ শতাংশ। এ অবস্থায় ফের আরও একবছর মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে কাজ শেষ না হলেও প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৮১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশে চারটি মেরিন একাডেমি স্থাপন (পাবনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর)’ প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে একবছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
এ পর্যায়ে সংশোধনীর কারণ হিসাবে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজস্ব খাতে জনবল সৃষ্টি ও নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট সুবিধাদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি মেরিন একাডেমির জন্য প্রকল্প চলাকালীন ১০ জন করে মোট ৪০ জন আনসার পাহারাদার হিসাবে নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছিল। এছাড়া আরসিসি জেটি নির্মাণ এবং ৩টি ট্রেনিং বোট ক্রয় আরডিপিপিতে সংস্থান রয়েছে। এই অংশগুলোর প্রয়োজনীয়তা নেই, তাই সেগুলো বাদ দেওয়া হবে।
এতে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের যেমন, একাডেমিক ভবন, ডরমেটরি ভবন, কমানডেন্ট ভবন, ডেপুটি কমানডেন্ট ভবন, ১ হাজার ৫০০, ১ হাজার ২৫০, ১ হাজার, ৮০০ ও ৬০০ বর্গফুট স্টাফ কোয়ার্টার ভবন, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, প্যারেড স্কয়ারের নির্মাণ ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় না বাড়লেও আগেই দু’দফায় ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনীতে করা হয় ৪৮৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনীতে আবারও ৩৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৫২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা করা হয়েছে।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে ৪টি নতুন মেরিন একাডেমি স্থাপিত হবে। এসব একাডেমিতে সমুদ্রগামী জাহাজের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মেরিন কর্মকর্তা-প্রকৌশলী সৃষ্টি হবে। দক্ষ মেরিন প্রকৌশলীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৭৬ শতাংশের অধিক হলেও প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।’
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী নৌযান নিরাপদ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রস্তুত এবং একই সঙ্গে বেকার সমস্যা দূর করা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌযান ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দক্ষ সমুদ্র নাবিক তৈরিতে উপকূলবর্তী জাতি হিসাবে বাংলাদেশের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ হচ্ছে দক্ষ সমুদ্র নাবিক তৈরির পূর্ব শর্ত এবং এটিই তাদের বাণিজ্যিক নৌযানে চাকরির সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করে। সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বাস্তব কারিগরি সুবিধাসহ আদর্শ পরিবেশ প্রয়োজন। মেরিন একাডেমি স্থাপন করা হলে সম্ভাব্য মেধাবী সমুদ্র নাবিক চিহিৃতকরণসহ তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় বাংলাদেশে ৪টি মেরিন একাডেমি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। একনেক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই প্রকল্পটির পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি অনুমোদন করেন।